এমন অনেকে আছেন, যাঁরা বাড়িতে ভালো কিছু রান্না করলে আগে ভিডিও করেন। বাচ্চার স্কুলের রেজাল্ট আনতে গেলে ভিডিও মাস্ট। কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সাজগোজ করলে মনে হয় ছবি তুলে রাখা উচিত। বেড়াতে গিয়ে আনন্দ বা রিল্যাক্স করে হাত-পা ছড়িয়ে ক’টা দিন কাটানোর বদলে প্রতি মুহূর্তের ছবি তুলে রাখায় বেশি মন দেন।
আপনারও কি দিনের সিংহভাগ সময় কাটে সোশাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থেকে? মাঝে মাঝে সোশাল মিডিয়ার আপডেট দেখে দেখে নিজেই হাঁফিয়ে ওঠেন অথচ ছাড়তেও পারেন না? কোনও কিছু পোস্ট করার পরে বারবার ক’টা লাইক, কমেন্ট পড়ল দেখতে উসখুস করতে থাকেন? এরকম হলে কিন্তু বলতেই হচ্ছে আপনার জীবন সোশাল মিডিয়ার উপরে খুব বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে আর আপনার এক্ষুনি দরকার সোশাল মিডিয়া ডিটক্স।
কয়েকটা জরুরি বিষয় মনে রাখতে হবে।
. সোশাল মিডিয়ায় কেউ সত্যিটা বলে না, নিজের জীবনের উজ্জ্বল দিকগুলোই কেবল তুলে ধরে। তাই কাউকে দেখে হীনমন্যতায় ভুগবেন না।
. সারাক্ষণ অন্যের জীবনে কী হচ্ছে দেখতে ব্যস্ত থাকলে নিজের কাজে মন দিতে পারবেন না।
. মনঃসংযোগের অভাব হবে একটা সময়ে, একনিষ্ঠ হয়ে টানা কোনও কাজ করতে পারবেন না।
. নিজের অজস্র ছবি বা লোকেশন সারাক্ষণ সবার সঙ্গে শেয়ার করার বিপদের দিকটা জানেন তো?
. রাস্তায় যতক্ষণ থাকবেন, ততক্ষণ সোশাল মিডিয়ায় চোখ রাখার দরকার নেই। সামান্য অসতর্ক বা অন্যমনস্ক হলেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কিছু লক্ষণ আছে, যা দেখলেই সতর্ক হওয়া উচিত, তা না হলে চারপাশের স্বাভাবিক জীবন থেকে আপনি ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। শেষে বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন কেউ থাকবে না, একা একা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পড়ে থাকবেন ও ডিপ্রেশনের শিকার হবেন।
সারাক্ষণ আপনার হাতে কি ফোন থাকে?
সেকেন্ডে সেকেন্ডে ফোন চেক করা কি আপনার স্বভাব হয়ে গেছে? কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময়, মাঝরাতে ঘুম ভেঙেও সোশাল মিডিয়ায় চোখ রাখেন, অথচ কী দেখছেন, কেন দেখছেন, নিজেই জানেন না? এরকম হলে কিন্তু জোর করে এবং সচেতনভাবে ফোন থেকে দূরে রাখতে হবে নিজেকে! পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকার সময় বা ঘুমোনোর সময় ফোন দূরে রাখুন। নিজের জন্য সোশাল মিডিয়া দেখার একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন, প্রতিজ্ঞা করুন তার বাইরে ফোন দেখবেন না। দিন পনেরো এভাবে একটানা করতে পারলে নেশা একটু হলেও কমবে।
চিন্তাভাবনা না করেই পোস্ট করেন?
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কি আপনি বিন্দুমাত্র ভাবনাচিন্তা না করেই সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দেন? মনে রাখবেন, জীবনটা উপভোগ করে বাঁচার জন্য, তার প্রতিটি মুহূর্ত সোশাল মিডিয়ায় দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামবেন না।
সোশাল মিডিয়ার কমেন্ট আপনাকে প্রভাবিত করে প্রবলভাবে?
মনের মতো কমেন্ট না পেলে বা কমেন্ট আদৌ না পেলে কি আপনি ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন? বা অন্য কোনও সোশাল মিডিয়ার বন্ধুকে সাজগোজ, রান্নাবান্না বা মতামতে টেক্কা দিতে না পারলে অসুবিধে হয়? তেমন হলে কিন্তু সোশাল মিডিয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। সোশাল মিডিয়া আপনার ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করুক, সেটা নিশ্চয়ই আপনি চান না?
আঙুলে, কবজিতে, পিঠে, ঘাড়ে টনটনে ব্যথা হচ্ছে আজকাল?
আজকাল কবজি, আঙুল বা পিঠে-ঘাড়ে খুব ব্যথা হচ্ছে? মোবাইলে স্ক্রোলিং করতে গেলে ব্যথার ভাব আরও বাড়ছে? তা হলে কিন্তু আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি স্ক্রোল করছেন। ব্রেক নিন। জোর করে হলেও কিছুটা সময় স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন। দশ মিনিট দিয়েই শুরু করুন, তারপর ধীরে ধীরে সময়টা বাড়াবেন!
বারবার পোস্ট এডিট করেন?
দীর্ঘ পোস্ট হলে আলাদা কথা। কিন্তু চারলাইনের পোস্টও কি বহুবার এডিট করতে হয় আপনাকে? বারবার কিছু না কিছু খুঁত খুঁজে পান? খালি মনে হয় সোশাল মিডিয়ায় ঠিকমতো নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন না? এই উদ্বেগের অর্থ, এবার কিছুদিন সোশাল মিডিয়া থেকে ছুটি নেওয়ার সময় হয়েছে। ভার্চুয়াল জীবন থেকে বেরিয়ে বাস্তবের দিকে তাকিয়ে দেখুন সেখানে আপনি কী কী মিস করছেন! পৃথিবীটা সোশাল মিডিয়া নির্ভর নয় এটা আপনাকে বুঝতে হবে।