বিবাহিতা বাঙালি মেয়ের সাজ সম্পূর্ণ হয় না সিঁদুর আর টিপ ছাড়া। আর কাজল ছাড়া তো বিবাহিতা-অবিবাহিতা কারওই চলবে না। পরার সুবিধের জন্য কম-বেশি সব মেয়েই টুক করে লাগিয়ে নেন আঠা দেওয়া বিন্দি। কিন্তু এর প্রতিটি থেকেই যে আপনার কী মারাত্মক বিপদ হতে পারে, তা জানেন কি?
কাজল
কাজলের ব্যবহার আজকের নয় – ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখবেন, সেই ক্লিওপেট্রার আমল থেকেই কাজল লাগানোর প্রথা চলে আসছে। কেবল যে মেয়েরাই তা ব্যবহার করেন তা নয়, মুঘল সম্রাটরা পর্যন্ত চোখে ইউনানি রীতি মেনে প্রস্তুত সুর্মা ব্যবহার করতেন।
একটা সময়ে মানুষের ধারণা ছিল, কাজল লাগালে যে কোনও কুনজরের প্রভাব এড়ানো সম্ভব। সেই সঙ্গে তা ভালো রাখে চোখের স্বাস্থ্য – চোখ শীতল রাখতে কাজল-সুর্মা দুইয়ের মধ্যেই নানা জড়িবুটি মেশানো হত। কাজলে সীসা থাকে, এক কালে মনে করা হত যে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সীসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করে দিয়েছে এ ধারণা একেবারেই ভুল। উলটে সীসা চোখের ভিতরে ঢুকে গেলে নানা বিপদ হতে পারে।
চোখের ভিতরের দিকের ওয়াটারলাইনে যদি কাজল পরার অভ্যেস থাকেই, তা হলে বাড়িতে তা বানিয়ে নিতে পারেন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেটাও ব্যবহার না করাই ভালো। বাচ্চাদের সিস্টেম বেশি স্পর্শকাতর হয়, তাদের শরীরের শোষণক্ষমতাও বেশি – যে কোনও টক্সিক কেমিকাল থেকে শিশুদের দূরে রাখুন। চোখের বাইরে কাজল, মাস্কারা, আইলাইনার, আইশ্যাডো ইত্যাদি লাগান – কোনও অসুবিধে নেই। দিনের শেষে সাবধানে তুলে নিলেই হবে। কিন্তু ভিতরে যেন কিছু না ঢোকে তা দেখবেন।
আঠা লাগানো টিপ
আঠা লাগানো টিপ তৈরি হয় কোনও না কোনও সিন্থেটিক উপাদান থেকে, তার মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিকেলের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে আঠার উপাদান থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। যাঁরা রোজ এই ধরনের টিপ ব্যবহার করেন, তাঁদের কপালে সাদা দাগ হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এই দাগ বাড়তে বাড়তে গোটা কপালে ছড়িয়ে যায়, কখনও সঙ্গে জ্বালা বা চুলকানিও থাকে। তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলেই টিপের ব্যবহার বন্ধ করুন, ডার্মাটোলজিস্ট দেখান। একান্ত ব্যবহার করতে হলে কুমকুমের দ্বারস্থ হতে পারেন।
সিঁদুর
বিবাহিতা নারীর সাজের আবশ্যক অঙ্গ সিঁদুর, প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে এর ব্যবহার চলে আসছে। এক কালে হলুদ, চুনের জল, নানা ভেষজ রঞ্জক মিশিয়ে সিঁদুর তৈরি করা হত – এখন মূলত কেমিকাল ব্যবহার করেই অনেক সস্তায় কাজ সেরে দেওয়া হয়। এর মধ্যে উপস্থিত মার্কারি সালফাইট আর সীসার কারণে সিঁথির পাশ থেকে চুল উঠে যায়, খুসকির সমস্যা হয়, চুলকানিও হতে পারে অ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে। হারবাল সিঁদুর তুলনায় অনেক কম ক্ষতিকর, অনেকে সিঁদুরের পরিবর্তে লিপস্টিকও ব্যবহার করেন।