আপনার নিজের যদি এই সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে আশ্বস্ত হোন প্রথমেই – আরও অনেকেই এমন একটা আতঙ্ক নিয়ে বাস করছেন। সমস্যাটা খুব অ্যাকিউট হয় যদি, তা হলে কাউন্সেলিং করাতে দ্বিধা করবেন না, কারণ অ্যাগোরাফোবিয়া ডেভেলপ করে গেলে সারতে সময় লাগবে।
তবে তার আগে জানা দরকার অ্যাগোরাফোবিয়া কী, তার লক্ষণটাই বা কীভাবে চেনা যায়? অ্যাগোরাফোবিকদের পাবলিক ট্রান্সপোর্টে, কোনও খোলা চত্বরে, ভিড়ের মাঝে, লিফটের মধ্যে, বন্ধ বাথরুমে দম আটকে আসে, তাঁরা নিজেদের বন্দি ভাবতে আরম্ভ করেন, হাঁসফাঁস অবস্থা হয়। লোকজনের মাঝে গেলেই এঁদের প্যানিক অ্যাটাক হয়।
বুঝতে পারছেন তো, এটা একটা মেডিক্যাল কন্ডিশন? নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়া এর হাত থেকে মুক্তি মেলে না, সময়ও লাগে। তবে স্রেফ কোভিডের কারণে যাঁরা দীর্ঘদিন বাড়িতে রয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই বাইরে বেরোতে গেলে মানসিক চাপ হচ্ছে এবং তাঁরা নানা বাহানায় লোক জনের মাঝে যাওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনটা কেন হচ্ছে জানেন?
. আপনি নিজের বাড়ির মধ্যেই একটা কমফর্ট জোন তৈরি করে ফেলেছেন এবং আপনার ব্রেন বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছে যে এই ঘেরাটোপের মধ্যে কেউ আপনাকে আক্রমণ করতে পারবে না।
. বাইরের পার্কে গিয়ে মর্নিং ওয়াক বলুন বা অফিস যাওয়া – কোনওটাই আর খুব সহজ নেই। সেই মাস্ক, গ্লাভস চড়িয়ে বেরোও, ফিরে এসে সব কেচে-ধুয়ে পরিষ্কার করে স্নান করা – ঝক্কি বেড়ে গিয়েছে অনেক। তাই বাড়ির ছাদে ইচ্ছেমতো ঘণ্টাখানেক হাঁটাটাই অনেক সহজ বলে মনে হচ্ছে। মন খুলে নিশ্চিন্তে ব্যায়াম করাও যাচ্ছে।
. বাইরে কোথাও বেড়াতে বা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছেন না? ভালো জামাকাপড় পরে সেজেগুজে বেরনোর চেয়ে ঘরের পোশাকেই বেশি স্বচ্ছন্দ থাকবেন বলে খাবার অর্ডার করে আনিয়ে নিচ্ছেন দরকারে, না হলে নিজেই রেঁধে নিচ্ছেন পছন্দসই ডিশ? একদিক থেকে অভ্যেসটা মন্দ নয়। খরচ বাঁচে, ছোঁয়াচও বাঁচে।
. ওয়ার্ক ফ্রম হোমেই আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ফের অফিস যেতে হবে, ক্যানটিনে গিয়ে বসতে হবে, একই লিফটে সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে যাতায়াত করবেন ভাবলেই শিউরে উঠছেন?
কীভাবে কাটাবেন এই পরিস্থিতি?
১. মেনে নিন যে আপনার চেনা পৃথিবীতে কিছু পরিবর্তন এসেছে, আর সব আগের অবস্থায় ফিরে পাবেন না।
২. বাইরে বেরোতে হবেই, নিউ নরমালের নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিন। আপনি যত বেশিদিন নিজেকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখবেন, তত বেশি সময় লাগবে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে। সতর্ক থাকুন, আতঙ্কিত হবেন না।
৩. মাস্ক পরার পাশাপাশি সারফেস থেকে যাতে না সংক্রমণ হয়, সেটাও দেখতে হবে। নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।
৪. অনেকের কাজ চলে গিয়েছে, আর্থিক সঙ্কট আছে। এই অবস্থায় নানা ধরনের স্ট্রেস চেপে ধরতে পারে। সেগুলির সঙ্গে মোকাবিলার জন্য ঠিক সময়ে খাওয়া-ঘুম জরুরি। স্ট্রেস যত ভালোভাবে হ্যান্ডেল করবেন, তত সহজে এই ধরনের সমস্যার সঙ্গে ডিল করতে পারবেন।
৫. সারাক্ষণ ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে রাখবেন না, মাঝে মাঝে বাইরের খোলা হাওয়ায় বেরোন। অসুবিধে হলেও বেরোতে হবে, না হলে অভ্যেসটা ছাড়তে পারবেন না কিছুতেই।