বাতাসে ঠান্ডার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে একটু একটু করে। মরশুম বদলের সময় সর্দিকাশিও হচ্ছে বিস্তর! তা ছাড়া কোভিডের খাঁড়া মাথার ওপর তো ঝুলছেই! সব মিলিয়ে গলাকে একটু আরাম দিতে আর ভাইরাস থেকে বাঁচতে গরম জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে। ছোটবেলাতেও মাঝেমধ্যেই বড়রা জোরজবরদস্তি করে গরম জল খাওয়াতেন মাঝেমাঝে। তাতে নাকি গলা ভালো থাকে, শরীরও ভালো থাকে! এখন গরম জল খাওয়ার ফলে ভাইরাস না মরলেও তার আরও নানা উপকারিতা সত্যিই আছে। জেনে নিন নিজেই!
1. বয়সের দাগ কমাতে
আপনার অ্যান্টি-এজিং ত্বক পরিচর্যার রুটিন রয়েছে জানি। তার সঙ্গে বাড়তি টোটকা হিসেবে গরম জল খান। আসল কথা হল, শরীরে টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থ জমে যাওয়ার কারণে আমাদের বয়স্ক দেখায়। গরম জল শরীর থেকে সে সব বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে ত্বকের কোষগুলো মেরামত করে এবং কোষগুলোর নমনীয়তা বাড়িয়ে তোলে! তাই গরম জলপানের পুরো সুবিধে উসুল করুন, তারুণ্যে ভরপুর থাকুন!
2. রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া উন্নত করতে
গরম জল খেলে আপনার গায়ের রং উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, রূপলাবণ্য অনেক বেড়ে যায়। না, বাড়িয়ে বলছি না একেবারেই! গরম জল খেলে শরীরে, স্নায়ুতন্ত্রে জমে থাকা ফ্যাট আর টক্সিন বেরিয়ে যায়,এবং শরীরের রক্ত সংবহন ব্যবস্থাটি আরও উন্নত হয়ে ওঠে। রক্ত সংবহন ভাল হওয়ার কারণে আপনার গায়ের রঙেও উজ্জ্বলতা ফুটে বেরোয়। এত ভালো টোটকা থাকতে ফেয়ারনেস ক্রিমের আর দরকার কী!
3. ওজন কমানোর হাতিয়ার
আপনি স্বাস্থ্য-সচেতন? তা হলে তো সকালে খালি পেটে গরম জল খাওয়ার উপকারিতার কথা আপনার জানা! বাড়তি ওজন কমাতে গরম জল খেতে বলেন ব্যায়ামের ইনস্ট্রাকটরেরা। গরম জল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আর শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়া বা মেটাবলিজমের হার, দুইই বেড়ে যায়। মেটাবলিজমের হার বাড়লে ক্যালরি পোড়ে দ্রুত গতিতে। ফলে আপনার পরিপাক তন্ত্র আর কিডনি, দুইই খুব ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীরে জমা হওয়া ফ্রি র্যাডিক্যালসের পরিমাণ কমে আসে। শরীরের অ্যাডিপোজ টিস্যু অর্থাৎ মেদ ভেঙে দিতে লেবুর রস খুবই কার্যকর। তা ছাড়া লেবুর রসে পেকটিন ফাইবার থাকে, তাই গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে খিদের ভাবও কমে। ঝটপট ওজন কমানোর এত ভালো একটা উপায় ট্রাই করে দেখবেন না?
4. ব্যথা থেকে মুক্তি
ব্যথায় গরম জলের ব্যবহার পুরনো ঘরোয়া টোটকা। গরম জলে সেঁক দেওয়ার ব্যাপারটা তো আছেই, পাশাপাশি পিরিয়ডের ব্যথাই হোক বা মাথাব্যথা, যে কোনও ব্যথা কমাতেই গরম জল পান করতে পারেন। পেটের পেশির উপর গরম জল এমনভাবে প্রভাব ফেলে যাতে ক্র্যাম্প বা পেশির শক্তভাব কমে যায়। গরম জল পান করলে রক্ত সংবহন বেড়ে যায় এবং শক্ত হয়ে থাকা পেশিগুলো আরাম পায়। কাজেই পরেরবার পেটে বা পিঠে ব্যথা হলে টপ করে পেনকিলার না খেয়ে বরং অল্প অল্প করে গরম জল খেয়ে দেখুন কাজ হয় কিনা!
5. হজমের সহায়ক
হজমের সমস্যা থাকলে অ্যান্টাসিড বা ডাইজেস্টিভ ওষুধপত্র না খেয়ে গরম জল খেয়ে দেখুন। গরম জল পাকস্থলীতে জমে থাকা খাবার ভেঙে দেয় এবং পরিপাকতন্ত্রকে মসৃণ গতিতে কাজ করতে দেয়। অন্যদিকে ঠান্ডা জল খেলে খাবারের তেল বা ঘি শক্ত হয়ে যায় এবং তা ফ্যাট হয়ে পেটে জমতে থাকে। এই কারণেই খাবারের খনিজ পদার্থগুলিও শরীরে শোষিত হয় না। তাই ভারী লাঞ্চ বা ডিনার করার পরে গরম জল খেয়ে দেখুন।
7. গরম জল খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
আচ্ছা, গরম জল খেতে বলছি মানেই যে সারাক্ষণ ঢক ঢক করে গরম জল খেতে হবে, তা কিন্তু নয়! পরিমিত পরিমাণে গরম জল খান, জলের তাপমাত্রাও বেশি রাখার দরকার নেই। অতিরিক্ত গরম জল খেলে মুখ, জিভ ও খাদ্যনালীর টিস্যু পুড়ে যেতে পারে, তাতে উপকারের চেয়ে অপকারটাই বেশি হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে হয় এক গেলাস এমনি গরম জল খান অথবা লেবু মিশিয়ে খান।
মনে রাখবেন: আপনার যদি কোনওরকম ওষুধ খাওয়ার অভ্যেস থাকে, তা হলে গরম জল খেতে শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কারণ ওষুধের কার্যকারিতার ওপর গরম জলের প্রভাব থাকতেও পারে।