গত বছর দেড়েকের মধ্য গ্যাজেটের ব্যবহার খুব বেড়ে গিয়েছে। অফিস হোক বা বিনোদন, বই পড়া বা আড্ডা দেওয়া – সবটাই হচ্ছে কোনও না কোনও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাহায্যে। এমনকী একেবারে ছোটো বাচ্চাকে খাওয়াতে বা ভোলাতে গিয়েও আমরা তার হাতে তুলে দিচ্ছি মোবাইল/ ট্যাব। সেই সঙ্গে অনলাইন ক্লাস তো আছেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, গ্যাজেট থেকে যে আলোর বিচ্ছুরণ হয়, তা ঠিক কীভাবে আমাদের ক্ষতি করে? তার আগে অবশ্য জানা দরকার ব্লু লাইট ঠিক কী।
. সূর্যের আলোর মধ্যে থাকে প্রাকৃতিক ব্লু লাইট – তাই দিনের বেলা বাইরে বেরোলে বা গায়ে রোদ লাগলে আপনার ব্লু লাইট এক্সপোজার হয়েই যায়।
. কৃত্রিম নীল আলোর উৎস হচ্ছে আপনার টেলিভিশন, স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, রিডিং ডিভাইস ও সমস্ত গ্যাজেট। সমস্যা হচ্ছে, ব্লু লাইটের উৎসের খুব কাছাকাছি থাকি আমরা। তাই সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি যতটা ক্ষতি করতে পারে, ব্লু লাইটের ক্ষমতা তার চেয়ে খুব কম নয়।
. বিবর্তনের সময়ে মানুষের চোখের লেন্স আর কর্নিয়া এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে তা অতিবেগুনি রশ্মির অনেকটাই ঠেকিয়ে দেয়, তা রেটিনা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। আপনি যদি ভালো সানগ্লাস পরে থাকেন, তা হলে তো এক শতাংশ অতি বেগুনি রশ্মিরও রেটিনা পর্যন্ত পৌঁছনোর কথা নয়। কিন্তু নীল আলো সরাসরি রেটিনা পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
. আপনার চোখ যদি অতিরিক্ত ব্লু লাইটের সংস্পর্শে আসে, তা হলে কিন্তু রেটিনার ক্ষতি হতে পারে। রেটিনার লাইট সেনসিটিভ কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে আরম্ভ করলে ম্যাকুলার ডিজেরেশন হয় তাড়াতাড়ি। সোজা কথায়, সমস্যা গুরুতর হলে মানুষ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়তে পারে। তবে এটাও ঠিক যে হিসেবের মধ্যে গ্যাজেট ব্যবহার করলে সমস্যা হয় না – মাত্রাছাড়া নির্ভরশীল হলেই মুশকিল!
. তবে ঠিক কতটা ব্লু লাইট এক্সপোজার আপনার চোখের পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকারক, সেটা এখনও বোঝা যায়নি, গবেষণা চলছে। তবে যাঁরা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করেন, তাঁরা একটা ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন অবশ্যই। চশমাতেও ব্লু লাইট ফিল্টার লাগিয়ে দিন।
. বেশি রাতের দিকে ঘর অন্ধকার করে ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহারের অভ্যেস যাঁদের আছে তাঁরা সাবধান। এতে চোখের উপর বাড়তি চাপ তো পড়েই, ঘুমের সাইকেলের বারোটা বাজে। তাই রাত জেগে গ্যাজেট ব্যবহার করবেন না।
. মনে রাখবেন, আপনার সাদা এলইডি বাল্ব থেকেও কিন্তু ট্র্যাডিশনাল আলোর চাইতে বেশি ব্লু লাইট বিচ্ছুরিত হয়।
কী করবেন
স্বাভাবিক রুটিন ছেড়ে বেশিদূর যাবেন না। যেহেতু এখন দিনের অনেকটা সময় গ্যাজেটের সামনে কাটাতেই হচ্ছে, তাই সময় সুযোগ পেলেই ছাদে যান। একটু হাঁটাচলার পাশাপাশি সবুজের দিকে তাকান। সময়ে ঘুমোতে যান। শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিলে তা এমনিতেই ভালো থাকবে।