মাঝে মাঝেই চেনা কারও সংক্রমিত হওয়ার খবর শুনছি আমরা সবাই – তার মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা প্যানডেমিকের শুরু থেকেই ঘরবন্দি, মোটেই বাইরে যাননি। ধাঁধা লেগে যাচ্ছে – এঁরা কোন পথে ভাইরাসের সংস্পর্শে এলেন? তা হলে কি আমাদের বাড়ির আসবাব, বাসনপত্র, বাজার থেকে আসা সওদার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল জীবাণু? ঠিক কীভাবে পরিষ্কার করলে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে?
করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছে গোটা দুনিয়া জুড়ে, রোজ নতুন কিছু আবিষ্কার হচ্ছে – বাতিল হয়ে যাচ্ছে পুরোনো ধ্যান ধারণা। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে সাম্প্রতিক কিছু তথ্য আপডেট করেছে, তাতে এ কথা পরিষ্কার যে সারা দুনিয়ায় বাইরে থেকে আনা খাবারের প্যাকেট, বাজার, টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, টাকা ইত্যাদি থেকে কিছু মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে বটে, তবে তার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
রোগের শুরুর দিকে যখন কিভাবে ভাইরাস ছড়ায় তা নিয়ে নানা গবেষণা হচ্ছিল, তখন সমস্ত রকম সারফেসে ভাইরাস ভরা তরল ছড়িয়ে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন যে তামায় ৪ ঘণ্টা, প্লাস্টিকে আর স্টিলে ৭২ ঘণ্টা আর কাঠে-কাগজে-কার্ডবোর্ডে অন্তত ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস। তার পর না জেনে সুস্থ মানুষ সেই সারফেস স্পর্শ করে নাকে-মুখে হাত দিলেই নতুন হোস্ট পেয়ে যায় জীবাণু। কিন্তু কার্যত দেখা গিয়েছে রোজের জীবনে মোটেই ব্যাপারটা তত সহজ হয় না।
ধরে নেওয়া যাক, আপনি করোনা পজিটিভ। হাঁচার সময়ে মুখে হাত দিয়েছিলেন, তার পর সেই ড্রপলেট লাগা হাতে দরজার হাতল ধরেছেন, ফলে ভাইরাস সেখানে চলে গিয়েছে। কিন্তু ড্রপলেট তো কয়েক মুহূর্তে শুকিয়ে যাবে, তখনও কি জীবাণু সক্রিয় থাকবে? যদি সেখানে রোদ লাগে, তা হলে জীবাণু আদৌ বাঁচবে তো?
হাসপাতাল, সেফ হোম, হোটেলের সারফেস থেকে নমুনা সংগ্রহ করে দেখা গিয়েছে এই কারণে সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা নগণ্য। তা ছাড়া যদি আপনি যথাযথভাবে সমস্ত সারফেস পরিষ্কার করেন এবং তার পর হাত ধুয়ে নেন, তা হলে তো আশঙ্কা আরও কমে।
তার চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক হতে পারে দরজা-জানলা বন্ধ করা ঘরে সংক্রমিতের সঙ্গে খানিক সময় কাটালে – বিশেষ করে তখন যদি আপনার মুখে মাস্ক না থাকে। বাজারে বা টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি করলে কোভিড হওয়ার চান্স অনেক বেশি, আক্রান্তের বাসন মাজা বা কাপড় কাচার সময়েও বাড়তি সাবধান হতে হবে। আক্রান্তের মাস্কে হাত লাগলে সংক্রমণ হতে পারে।
বাড়িতে কোনও রোগী থাকলে অতি সতর্ক থাকুন। এক তোয়ালে, সাবান ব্যবহার করবেন না। এখনও পর্যন্ত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট ড্রপলেটের মাধ্যমেই মানুষ থেকে মানুষে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। নেহাত প্রয়োজন না পড়লে বাইরে যাবেন না, বাড়িতে অতিথি আনবেন না। হাত ধুয়ে ফেলুন বারবার, কারও সামান্য অসুস্থতা দেখলেও মাস্ক পরুন।
এই যুদ্ধে মাস্ক আর সামাজিক দূরত্ববিধি আপনার সব চাইতে বড়ো হাতিয়ার। সেই সঙ্গে নাগরিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করাটাও জরুরি। অনেকেই আছেন, যাঁরা আক্রান্ত হওয়ার পরেও বাড়িতে কাজের সহায়ক বা ড্রাইভারের আসা-যাওয়া বন্ধ করেননি। এতে আপনার হয়তো সুবিধে হচ্ছে, কিন্তু আরও বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে — তা ভেবে দেখেছেন?