মোবাইল/ কম্পিউটার স্ক্রিনের সঙ্গে সখ্য না পাতিয়ে উপায় আছে কি কারও? বাচ্চাদের নানান মজাদার অ্যাক্টিভিটি থেকে আরম্ভ করে দূর শহরে থাকা বন্ধু-আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইলেকট্রিকাল গ্যাজেট। অফিসের কাজ তো বটেই, আজকাল বাজারদোকান, ওষুধ কেনা, ডাক্তার দেখানো, লেখা, পড়া, বিনোদন, ব্যাঙ্কের কাজ এমনকী দাবা বা ফুটবল খেলা – সব কিছুই হয় ট্যাব, না হলে ফোন অথবা ল্যাপটপেই সারা হচ্ছে।
এর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল, গড়পড়তা মানুষের শারীরিক কর্মকান্ড কমছে। সেই সঙ্গে অ্যাপের দৌলতে নানা মুখরোচক খাবারদাবার এসে যাচ্ছে হাতের মুঠোয় – ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। খুব কাছ থেকে একদৃষ্টে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের বারোটা বাজছে, সেই সঙ্গে ঘাড়ে, পিঠে ব্যথার সমস্যাও তৈরি হয়। খুব কম বয়স থেকে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে পশ্চার বা দেহভঙ্গিমার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি চিন্তার বিষয় হচ্ছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম আপনার ঘুমের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। স্ক্রিন থেকে বিচ্ছুরিত ব্লু লাইটের কারণে ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন সেরোটনিনের নিঃসরণ হয় না। ফলে রাত জেগে মোবাইল দেখার অভ্যেস থাকলে আপনার ঘুমের সমস্যা হতে বাধ্য। বেশিদিন টানা ঘুম না হলে আপনার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটবে, স্ট্রেস বাড়বে, আপনি খিটখিটে হয়ে যাবেন, মাথা ধরার সমস্যা বাড়বে, কমবে প্রোডাক্টিভিটি। যাঁরা অফিসের কাজের সময়েও মোবাইলে স্ক্রল করে চলেন, তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়, তাঁরা অফিস আওয়ারের মধ্যে কাজ শেষ করে উঠতে পারেন না আবার সেই কারণেও মনোকষ্টে ভোগেন।
বিজ্ঞান পত্রিকা ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, কোভিডের সময় থেকে মানুষের স্ক্রিন টাইম বেড়ে গিয়েছে অন্ততপক্ষে ৫০ শতাংশ, পাল্লা দিয়ে কমেছে ঘুম। বিশেষ করে যে সব বয়স্ক মানুষ দিনের বেলা অল্প অল্প ঘুমিয়ে নেন, তাঁরা যদি বই পড়া বা সিনেমা দেখার কাজে গ্যাজেটের ব্যবহার করেন, তা হলে বিনিদ্র রজনীযাপন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে হলে কী করবেন?
. দেখুন, যে কথা খুব সত্যি যে জীবন থেকে গ্যাজেট পাকাপাকিভাবে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তার সুবিধের দিকটাই বেশি। কিন্তু তাই বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে কাটাবেন না। নিজের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন – বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সময়টা ঘণ্টা দুয়েকের বেশি হতে দেওয়া উচিত নয়। প্রাপ্তবয়স্করা বড়োজোর ঘণ্টা তিন-সাড়ে তিন স্ক্রিন এক্সপোজার বরাদ্দ রাখুন নিজের জন্য।
. ফোন/ ল্যাপটপ/ গ্যাজেট অনুজ্জ্বল রাখুন। আজকাল অবশ্য বেশিরভাগ নির্মাতা সংস্থাই গ্যাজেটের ব্লু লাইট নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে দেয়। তাও সতর্ক থাকা জরুরি। রাতের দিকে অনুজ্জ্বল ফোন ব্যবহারই বিধেয়।
. অফিসের বাইরে সেখানকার কাজ না করার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে মেল চেক করা, তার উত্তর দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটা সময়ই বরাদ্দ রাখা উচিত।
. যদি মনে হয় যে ফোন ছাড়া একেবারেই থাকতে পারছেন না, তা হলে একবার মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন।
. শারীরিক পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই, এ কথা মনে রাখবেন। স্রেফ সকালে একটু মর্নিং ওয়াক করলেই হবে না, সারা দিন সচল থাকুন। সিঁড়ি ভাঙুন, ছোটোখাটো কাজ করুন।
. দিনের বেলা ঘুমোবেন না। বিশেষ করে যাঁদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, তাঁরা না ঘুমিয়ে দিন পার করে রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার চেষ্টা করুন।