এ দেশের বহু মানুষ এখনও আয়রনের অভাবে ভোগেন, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার হার বেশি। তেমনটাই জানা গিয়েছে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকে। আয়রন সাপ্লিমেন্টের দাম খুব বেশি নয়, তা পাওয়া যায় সহজে। তবে সুষম খাবারের মাধ্যমে শরীরে আয়রন প্রবেশ করলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাবেন। আয়রনের ঘাটতি থাকলে কিন্তু আপনি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বেন, কোনও কাজেই আগ্রহ পাবেন না। তাই সমস্যাটা জিইয়ে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।
একটা খুব জরুরি কথা মনে রাখতে হবে এই প্রসঙ্গে – স্রেফ আয়রন খেলেই হবে না, সঙ্গে অব্যাহত রাখতে হবে ভিটামিন সি-এর জোগান। একমাত্র সে ক্ষেত্রেই শরীর সঠিক মাত্রায় আয়রন শোষণ করতে পারবে। আয়রনের শোষণ না হলে কিন্তু তা কাজে দেবে না। লোহার কড়াইতে রান্না করলেও কিন্তু খাবারে আয়রন যোগ হবে।
যে কোনও প্রাণিজ প্রোটিন থেকে প্রচুর আয়রন মিলবে। লাল বা সাদা মাংস, লিভার, সামুদ্রিক মাছ, শামুক, ঝিনুক খেতে পারেন। সবুজ শাকসবজি, বিশেষ করে পালংশাক, কাঁচকলা, যে কোনও বিনস, সোয়া, শুকনো ফল ইত্যাদিতেও আয়রনের মাত্রা বেশি। আজকাল আয়রনযুক্ত ওটস, চাল, আটা পাওয়া যায়, সেগুলিও খেতে পারেন।
এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে যাঁরা নিরামিষ খাবার খান, তাঁদের আয়রনের অভাব হয় বেশি। যদি খাদ্যতালিকায় রাজমা, খেজুর, কাবুলি ছোলা, কালো চানা, গোটা মুগ ইত্যাদি থাকে, তা হলে কোনও চিন্তা নেই। সবুজ শাকসবজিতে অনেকটাই ভিটামিন সি থাকে – তাই তা বেশিক্ষণ রান্না করবেন না। পালং সাঁতলে রান্না করুন, তাতে স্বাদ আর পুষ্টিগুণ দুটোই অক্ষত থাকবে।
খাদ্যতালিকায় আয়রনের পরিমাণ বাড়ালে অনেকে পেটের সমস্যায় ভোগেন। সাধারণত কনস্টিপেশন ভোগাতে আরম্ভ করে। তেমনটা হলে খাদ্যতালিকায় যোগ করুন বাড়তি ফাইবার। সবজা বা চিয়া সিড খেতে পারেন। খাওয়া যায় ইসবগুলের ভুষি। আর চেষ্টা করুন জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর। জল বেশি খেলে কোষ্ঠ নরম হওয়ার পাশাপাশি আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে সব টক্সিন, ভালো থাকবে ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্য।
টোফু, ব্রকোলি আর কুমড়োর বীজেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাবেন। বিশেষ করে কুমড়োর বীজ খেতে খুব ভালো, আপনি ছোটো একটা কৌটোয় ভরে কাছেও রাখতে পারেন স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়ার জন্য। ব্রকোলি হালকা ভাপিয়ে নিয়ে নুন-মরিচ-লেবুর রস-চিলি ফ্লেক্স মিশিয়ে খান – দারুণ জলখাবার হবে!
কী? এতক্ষণ স্বাস্থ্যকর খাবারের নাম শুনতে শুনতে একেবারে বোর হয়ে গিয়েছেন? একটা ভালো খবর দেওয়া যাক – ডার্ক চকোলেটও আয়রনে পূর্ণ। তাই মাঝে মাঝে নিজেকে ভালো মানের ডার্ক চকোলেট উপহার দিন – শরীর আর মন, দুই-ই ভালো থাকবে।