এই যে বার বার কোভিড বিধি মেনে চলার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তা করলেই কি ভাইরাস রোধ করা যাবে? ফের আপনি একমাস আগের পরিস্থিতি ফিরে পাবেন? এমন একটা প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে আছেই। আসুন দেখা যাক, এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন আর সত্যিটাই বা কী?
কোনও সংক্রামক অসুখ, বিশেষ করে কোভিডের মতো অতিমারির সঙ্গে লড়াই করবার দুটো পর্যায় আছে। এক হচ্ছে, রোগ থেকে নিজেকে বাঁচানো। আর দুই, রোগ আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা।
একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে কী করতে হবে তা মোটামুটি সবার জানা। সেই সঙ্গে এটাও জানেন তো দেশ জুড়ে চলছে ওষুধ, অক্সিজেন আর হাসপাতালে বেডের আকাল? তাই প্রথম পথ অনুসরণ করা ছাড়া সাধারণ মানুষের আর খুব বেশি কিছু করার নেই।
যে কোনও অতিমারি ঠেকানোর জন্য NPI বা নন ফার্মাসিউটিকাল ইন্টারভেনশনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই যে বার বার বাইরে থেকে এসে হাত ধুয়ে বা স্যানিটাইজ করে নিতে বলা হচ্ছে, মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে, একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে – এগুলি এনপিআইয়ের প্রাথমিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে। এর মাধ্যমে আপনি ভাইরাসকে আপনার শরীরের বাইরেই রাখতে পারবেন।
অনেকের বাড়িতেই সামান্য লক্ষণযুক্ত রোগী আছেন, তাঁদের পরিচর্যা করতে হচ্ছে। তাঁরাও কিন্তু এই বিধি মেনে চললে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন মারণ ভাইরাসের কবল থেকে। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’-এর সমীক্ষা বলছে, বিভিন্ন দেশে অতিমারির শুরু থেকে যেভাবে এনপিআই প্রয়োগ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট কার্যকর ও সফল বলেই প্রমাণিত।
তাই আশা হারাবেন না। ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে রোগের প্রকোপ কমতে করেছিল, তার কারণ আমরা সবাই তখন নিয়ম পালন করে চলেছি। ভাইরাস নতুন হোস্ট পায়নি, তাই সংক্রমণ ছড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। যে মুহূর্তে আমরা নিয়ম পালনে ঢিলেমি দেখিয়েছি, তখন থেকেই ফের তা দাঁত-নখ বের করে আক্রমণ শানিয়েছে।
অনেকেই ভাবছেন, ‘হলে হবে, কী আর করা যাবে’ বা ‘লকডাউন তো হচ্ছে না, তাই নিয়ম মানার দরকার নেই’ – এঁদের থেকে দূরে থাকুন। যাঁদের প্রিয়জনের জন্য হাসপাতালের বেড জোগাড় করতে হচ্ছে বা অক্সিজেনের খোঁজে মাথার চুল ছেঁড়ার দশা – তাঁরা বুঝবেন সমস্যা কতটা গভীর হতে পারে।
ভাইরাসের মিঊটেশন ঠেকানোর ক্ষমতা আপনার নেই। কিন্তু যেভাবে দস্যু-তস্কর ঠেকাতে নিজের বাড়ির দরজার তালা লাগান, সেইভাবে রক্ষা করুন নিজের শরীরকে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। যাঁরা নিয়মকানুন মানছেন না, তাঁদের থেকে দূরে থাকুন। বাড়িতে কারও অসুখ করলে আইসোলেশনের সব নিয়ম মেনে চলুন অক্ষরে অক্ষরে।
আর হ্যাঁ, যে প্রশ্ন দিয়ে এই বিষয়ের অবতারণা হয়েছিল – নিয়ম মানলেই কি পরিস্থিতি বদলাবে? উত্তর হল – আজ্ঞে হ্যাঁ, বদলাবে। সচেতন হোন। নিজের নিরাপত্তায় ঢিল দেবেন না, তার চেয়ে বড়ো ভুল হয় না। জনসাধারণের বেশিরভাগই যদি কোভিড-বিধি মানেন, তা হলে একমাসের মধ্যেই কেসের সংখ্যা কমতে বাধ্য।
পুলিশকে ধরপাকড় চালিয়ে ফেস মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হচ্ছে জনতাকে। যেখানে মুমূর্ষু রোগীর পরীক্ষার জন্য টেস্ট কিট মিলছে না, সেখানে ফাঁকায় ফাঁকায় কাশ্মীর বা উত্তরাখণ্ড বেড়াতে যাওয়ার অনুমতিপত্র সংগ্রহ করার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট করানোর ধুম পড়ে গিয়েছে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে। এভাবে নিজেদের খাদের কিনারে দাঁড় করানোর কোনও প্রয়োজন আছে কি?