যাঁরা স্বাস্থ্যসচেতন, তাঁরা ময়দা থেকে শতহস্ত দূরে থাকেন সব সময়ে – বিস্কিট দেখলেও নাক সিঁটকে ফেলেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা ইত্যাদি থাকলেও ময়দা ডায়েট থেকে বাদ দিতে বলা হয়। কিন্তু সত্যিই কি ময়দা শরীরের পক্ষে বিষতুল্য?
আসলে আমরা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের হাত ধুয়ে ফেলতে খুব ভালোবাসি। ময়দা খারাপ, পুষ্টিগুণ নেই, প্রচুর ক্যালোরি বলে চেঁচানোর সময় খেয়াল করি না যে আজকের খাদ্যতালিকায় তা কীভাবে জাঁকিয়ে বসেছে। আমরা নিজেরাই সনাতন মুড়ি, চিড়ে, সুজি বাদ দিয়ে ময়দাকে রোজের খাবারের অঙ্গ বানিয়েছি, তার পর দোষ চাপাচ্ছি তার ঘাড়েই!
রোজ সকালে পাউরুটি খাচ্ছেন, লাঞ্চে মিক্সড চাউমিন বা গার্লিক নান, বিকেলে মোমো আর রাতে পিজা বা পাস্তা? তা হলে তো সত্যিই ময়দা আপনার স্বাস্থ্যের বারোটা বাজাচ্ছে, দাঁতে ক্যাভিটি হল বলে! কেক, পেস্ট্রি, বিস্কিট, ইনস্ট্যান্ট ন্যুডলস আমাদের রোজের খাবারের তালিকায় জাঁকিয়ে বসেছে। সঙ্গে আছে ফুচকা, পাপড়ি চাট, নিমকি, সিঙাড়া, স্যান্ডউইচ, কচুরি। একটু খতিয়ে দেখলেই বুঝবেন, সারাদিন যতবার ময়দা খাওয়া হয়, ততবার কিনওয়া বা ওটস খেলেও শরীর নিতে পারবে না!
মনে রাখবেন, আটা ভাঙিয়ে যখন ময়দা বের করা হয়, তখন তা মিহি ও ধবধবে সুন্দর করে তোলার জন্য বাদ দেওয়া হয় সবটুকু ভুষি। সেই ফাঁক গলেই বেরিয়ে যায় তার পুষ্টিগুণ – বিনিময়ে ময়দা হয়ে ওঠে সুস্বাদু। তবে এমনি নয়, সঙ্গে ফ্যাট অর্থাৎ তেল-ঘিয়ের কম্বিনেশন হলে ময়দার স্বাদ অতুলনীয় হয়ে ওঠে। ময়দা, চিনি, রিফাইন্ড তেল নিজেদের বিপাকের জন্য শরীর থেকে ভিটামিন আর মিনারেল শোষণ করে নেয়, ফলে রোজ ময়দা খেলে তার ঘাটতি তৈরি হয়।
ময়দার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হাই, তা শরীরে বাড়তি অ্যাসিড তৈরি করে। ময়দার তৈরি খাবার নিয়মিত খেলে আপনার সুগার আর ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে, আর্টারির দেওয়ালে তৈরি হতে পারে প্লাক, ফ্যাটি লিভার আর কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারেন। মুশকিল হচ্ছে, এই একটি উপাদান আমাদের রোজের খাবারে এমনভাবে সেঁধিয়ে গিয়েছে যে চাইলেও তার হাত থেকে মুক্তি মেলে না! ময়দার তৈরি পাউরুটি খুব নরম আর স্বাদু হয়, আটার রুটি খেয়ে আরাম পাবেন না। বিশেষ করে বাচ্চাদের ডায়েট থেকে তা দূর করা খুব কঠিন!
ময়দার হাত থেকে বাঁচতে কী করবেন?
. বাইরের খাবারের উপর আস্থা কমাতে হবে। বাইরের খাবার বলতে আমরা পাউরুটি, বিস্কিট, টিফিন কেকের মতো আপাত নিরীহ খাবারগুলিকেও ধরব। বাড়িতে রান্না করুন। কী খাচ্ছেন, বুঝে খান।
. কেক, পেস্ট্রি, লুচি, পরোটা, ফুচকা, চাট রোজের খাবার হতে পারে না। ন্যুডলস, পাস্তাও না। আমাদের দেশে নানা স্বাস্থ্যকর জলখাবার আছে – ছাতু, মুড়ি, চিড়ে, ইডলি, ধোকলা, দোসা ইত্যাদি বানিয়ে নিন। জলখাবার বানাতে খুব পরিশ্রম হয় না। ওট, বাজরা, কিনওয়াও খেতে পারেন।
. ময়দাকে স্বাস্থ্যকর করে তুলুন। পরোটা তৈরির সময় ময়দা, আটা আর বেসন নিন সমান পরিমাণ – দারুণ মুচমুচে হবে। ছাতু, কড়াইশুঁটি বা কোনও ডাল বাটা দিয়ে পুর তৈরি করে নিতে পারেন। তাতে রাফেজ আর প্রোটিনের পরিমাণ বাড়বে। যে কোনও রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটকে স্বাস্থ্যকর করে তোলার এটাই সেরা উপায়।
. যেদিন ময়দার খাবার খাচ্ছেন, সেদিন আর মিষ্টি খাবেন না। তাহলে রক্তে চিনির মাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তেই থাকবে। লুচির সঙ্গে ছোলার ডাল খেতে পারেন মাঝে-সাঝে, লুচি-পায়েস তোলা থাক জন্মদিনের জন্য। ভালো খাবার রোজ খেতে নেই!
. অনেকে আটা হজম করতে পারেন না, ময়দায় অসুবিধে হয় না। আপনার সম্ভবত গ্লুটেন অ্যালার্জি আছে, পুষ্টিবিদ দেখিয়ে ডায়েট চার্ট বদলান।