যাঁদের নিয়মিত কোনও ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা প্রায় সকলেই এই পরিস্থিতিতে পড়েছেন কখনও না কখনও! ডাক্তারবাবুরা সমস্ত পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন লেখার সময় সুগার প্রেশারের মতো ওষুধের ডোজ কমিয়ে বা বাড়িয়ে দেন হামেশাই! এদিকে পুরনো ডোজের সেই ওষুধ হয়তো বেশ কয়েক পাতা মজুত আছে বাড়িতে। অনেক সময়ই আলস্যবশত পুরনো পাতা পালটে নতুন পাতা নেওয়া হয় না, এদিকে ওষুধ নষ্ট করাও যাবে না! তাই যে ডোজটা কমে হাফ হল, সেটা মাঝখান থেকে ভেঙে অর্ধেক করে খেয়ে নেন অনেকে। ট্যাবলেটের আকার বড় হলে গিলতে অসুবিধে হয় অনেকের, তাঁরাও ভেঙে খান ট্যাবলেট। আবার ডোজ ডবল হলে একটার জায়গায় দুটো বড়ি খেয়ে ফেলেন, এমন উদাহরণও আছে। এ গল্প যাকে বলে ঘরে ঘরে প্রচলিত!
প্রশ্ন হল, কতটা সঠিক এ অভ্যাস? ইচ্ছে করলেই কি গোটা ওষুধ ভেঙে আধখানা করে খাওয়া যায়? গবেষক ও চিকিৎসকেরা কিন্তু বলছেন, কিছু কিছু ওষুধ ভেঙে খাওয়ার উপযোগী হলেও সব ওষুধ মোটেও তা নয়। যেমন টাইম রিলিজ বা এক্সটেন্ডেড রিলিজ ট্যাবলেট ভেঙে খেলে ওষুধে কোনও কাজই হবে না। ক্যাপসুল তো ভেঙে খাওয়া সম্ভবই না! যে সব ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটের গায়ে কোটিং থাকে, সে সব ভাঙলেও ওষুধের গুণ নষ্ট হয়ে যাবে, উলটে বিষক্রিয়াও হতে পারে। অনেক সময়ই ভাঙা অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যায়। খুব ছোট ট্যাবলেট ভাঙতে গিয়েও ডোজ এদিক ওদিক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তা হলে ট্যাবলেট কি ভেঙে খাওয়া যাবেই না? যাবে, তবে যে সব ট্যাবলেটের গায়ে মাঝবরাবর স্পষ্ট করে দাগ কাটা আছে, একমাত্র সেই ট্যাবলেটই ভেঙে খেতে পারেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। বাকি ভাঙা অংশটুকুও খুব সাবধানে রাখতে হবে, যাতে গুণ নষ্ট না হয়ে যায়। যাঁদের বড় ট্যাবলেট একবারে গিলতে অসুবিধে হয়, তাঁরা ইচ্ছেমতো ওষুধ ভেঙে খাবেন না। বরং অসুবিধের কথা ডাক্তারবাবুকে জানান, তিনিই বিকল্প উপায় বাতলে দেবেন।
এ তো গেল ট্যাবলেট ভেঙে আধখানা করে খাওয়ার প্রবণতার কথা! এর উলটোটাও দেখা যায় হামেশাই। মানে এতদিন হয়তো খাচ্ছিলেন ৫ পাওয়ারের ট্যাবলেট, কিন্তু পরবর্তী চেকআপে ডাক্তারবাবু ওষুধের পাওয়ার বাড়িয়ে ১০ করে দিয়েছেন! বাড়িতে পড়ে থাকা ৫ পাওয়ারের ওষুধগুলো তখন অনেকেই দুটো করে খেয়ে দশের কোটা ভরে দেন। আপাতদৃষ্টিতে তাতে কোনও সমস্যা মনে না হলেও একেবারে ঝামেলাহীনও নয়। একটা ১০ মিলিগ্রামের ওষুধ যেভাবে আপনার শরীরে ঢুকে কাজ করবে, দুটো ৫ মিলিগ্রামের ওষুধ অবিকল একইভাবে কাজ করবে, তা হলফ করে বলা যায় না। কারণ শরীরের ওষুধ শোষণ করার ক্ষমতা কেমন, সেটা নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের ওপর। যদি দুটি ওষুধ একসঙ্গেই খাওয়া হয় এবং শরীর তা ঠিকঠাক শোষণ করতে পারে, তা হলে দুটো সিঙ্গল ডোজ ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি আপনার নতুন প্রেসক্রাইব করা ওষুধের গায়ে কোটিং থাকে, অথচ বাড়িতে বেঁচে যাওয়া কম পাওয়ারের ওষুধে তা না থাকে, তা হলে একসঙ্গে দুটো ৫ মিলিগ্রামের বড়ি খেয়েও একটা ১০ মিলিগ্রামের সমান ফল পাবেন না আপনি।
এ সব ক্ষেত্রে সমাধান একটাই। অল্প কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে নিজের শরীরের সঙ্গে আপোস করবেন না। বরং ওষুধের দোকানের সঙ্গে আগে থেকে কথা বলে রাখুন যাতে ডোজের হেরফের হলে পাতাটাই পালটে নেওয়া যায়। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে ওষুধ ভাঙা, ডোজ কমানো বাড়ানো, এ সবের কোনওটাও করা যাবে না, সেটা কি আর আলাদা করে বলার দরকার আছে?