জানেন তো, ভারতবর্ষেই শর্করা বা চিনির জন্ম? তাই মিষ্টি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু লক্ষ করলেই বুঝতে পারবেন, যে বাকি সব কিছুর শেষে অল্প পরিমাণ মিষ্টি খাওয়ার রেওয়াজ আছে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে, তা কখনওই প্রধান খাবার হয়ে ওঠেনি।
আজ আমরা যে ধরনের খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি, তার মধ্যে চিনি লুকিয়ে থাকে নানাভাবে, তাই যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে ওবেসিটি আর টাইপ টু ডায়াবেটিসের সমস্যা। স্বাভাবিক হিসেব বলে, আপনার দৈনিক যতটা ক্যালোরির প্রয়োজন, তার ১০ শতাংশের বেশি মিষ্টি থেকে আসা উচিত নয়। মানে দিনে ৭-৮ চাচামচের বেশি চিনি খাওয়া ঠিক নয়।
এবার হিসেব করে দেখুন, আপনি সারা দিনে চা-কফি বা অন্য পানীয়ের মাধ্যমে কতটা চিনি খান। তার পর আছে বিস্কিট, জ্যাম, প্যাকেটবন্দি সিরিয়াল, সস, চাটনি ইত্যাদিতে মিশে থাকা চিনি। এর পাশাপাশি যদি কেক-পেস্ট্রি-সফট ড্রিঙ্ক বা দোকান থেকে কেনা মিষ্টি খাওয়ার অভ্যেসও থাকে, তা হলে তো আর কথাই নেই!
এবার প্রশ্ন, এই অভ্যেসের ফলে আপনার কী কী সমস্যা হতে পারে? ওজন তো বাড়বেই, কারণ বাড়তি ক্যালোরি প্রতিদিন খরচ করার জন্য যতটা অ্যাক্টিভিটি দরকার, ততটা সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। চিনি বা যে কোনও মিষ্টি খাবার মস্তিষ্কে ডোপামাইন নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। তাতে মন ভালো হয়। দেখবেন, মন খারাপ হলে আইসক্রিম খেতে বেশি ভালো লাগে!
সমস্যা হচ্ছে, এই সুগার রাশের আনন্দটা বেশিক্ষণ থাকে না, ধুপ করে পড়েও যায়। তাই একটা সময়ের পর আপনার শরীর আরও বেশি মিষ্টি চাইবে। চিনি দেওয়া চা বা কফি, নরম পানীয়ে প্রচুর ফ্রুকটোজ থাকে। বেশি ফ্রুকটোজ শরীরে গেলে বেশি বেশি খিদে পাবে। অন্যদিকে আবার তার প্রভাবে লেপটিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে শরীর। লেপটিন কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, তা আপনার খিদের বোধ নিয়ন্ত্রণ করে।
মিষ্টি খাবারের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স হাই হয়। মানে হচ্ছে, তা রক্তে শর্করার পরিমাণ ঝট করে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই ধরনের খাবার যত বেশি খাবেন, তত বাড়বে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ, সক্রিয় হয়ে উঠবে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড। গা-হাতে ব্যথা বা ব্রণ বাড়লে মিষ্টি খাওয়ায় রাশ টানুন, ফল মিলবে হাতে-নাতে।
অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে কিন্তু ত্বকের বয়স বাড়বে তাড়াতাড়ি। কোলাজেন আর ইলাস্টিনের ক্ষতি করে গ্লুকোজ – তার ফলেই সময়ের আগে বলিরেখা পড়ে ত্বকে। হতে পারে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যাও।
তার মানে কী দাঁড়াল? মিষ্টি খাওয়া যাবে না একেবারেই? মোটেই না! হিসেব করে খেতে হবে কেবল।
মিষ্টি খাওয়ার জন্য সপ্তাহে একটি বা দু’টি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে রাখুন। সেই দিনগুলোয় সকাল থেকে নিয়ম করে প্রতিটি মিল খান, বেশি করে প্রোটিন খেতে হবে। কার্পণ্য করবেন না জল খাওয়ায়। পেট যদি ভরা থাকে, তা হলে ইচ্ছের বাইরে গিয়ে বেশি মিষ্টি আপনি চাইলেও খেতে পারবেন না।
কতগুলো মিষ্টি খাচ্ছেন, তার চেয়েও বেশি জরুরি হচ্ছে কী মানের মিষ্টি খাচ্ছেন। খুব ভালো কোয়ালিটির জিনিস বাছুন, তাতে পকেটের উপর বেশি চাপ পড়লে সংখ্যাটা কমিয়ে দিন, কিন্তু আপোস করবেন না। আর ইচ্ছে হলেই মিষ্টি খাওয়া যাবে জানলে আপনার মনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে নিশ্চিতভাবেই!
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম