দু’ দল চা প্রেমী মানুষের দেখা মেলে – একদল ঘোর লাল চা ভক্ত। ভালো দার্জিলিং পাতা ঠিক ক’ মিনিট ভেজালে পারফেক্ট লিকার হয়, তা এঁদের নখদর্পণে। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন, তাঁরা ঘন দুধে চায়ের পাতা, আদা, বেশ খানিকটা চিনি আর এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে তবেই খেতে পছন্দ করেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে তেড়েফুঁড়ে গরমটা পড়ছে, তাতে কোন ধরনের চা খেলে শরীর বেশি ঝামেলা করবে না? গোড়াতেই একটা কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো, এই যে বাঙালি বছরের অধিকাংশ সময়ে নানাবিধ পেটের রোগে ভোগে, তার কিছু কারণ আছে। আমরা এমন অনেক কিছু খাই, যা সুস্থ শরীরকে ব্যস্ত করে তোলে। যেমন সকালে আর বিকেল দুধ চা খাওয়ার অভ্যেস।
চা কিন্তু সনাতনভাবে ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসের অঙ্গ ছিল না। চিন দেশ থেকে এ নেশা ধরে ব্রিটিশদের। তাড়া যেখানে যেখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছে, সেখানেই চায়ের চাষ শুরু হয়েছে – দার্জিলিংয়ের পাহাড়ও সেই নিয়মের বাইরে নয়। ভারতীয়দের চায়ের স্বাদটা মোটেই ভালো লাগত না শুরুতে, তার তিক্ত কষাভাব কমাতে দুধ আর চিনি যোগ করা শুরু হয়। তার পর স্বাদ বাড়াতে এলাচ, আদা, লবঙ্গ, তেজপাতার মতো উপাদানের ব্যবহার চালু হয় ধীরে ধীরে।
চায়ের মধ্যে ভালো কিছু জিনিস আছে, তার মধ্যে একেবারে প্রথমেই আসবে অ্যান্টি অক্সিডান্ট। যে চায়ের প্রসেসিং যত কম, তাতে অ্যান্টি অক্সিডান্ট তত বেশি। যেমন গ্রিন টি – তাই সামান্য লেবু-মধু দিয়ে গ্রিন টি পানের অভ্যেসটা নেহাত খারাপ নয়। চায়ের পাতা গরম জলে ভিজিয়ে রাখলে তার ক্যাটেচিন আর এপিক্যাটেচিন অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। কিন্তু যেই আপনি তা বেশিক্ষণ ফোটাবেন, দুধ, চিনি ইত্যাদি যোগ করবেন সঙ্গে সঙ্গেই সব গুণ মাঠে মারা যাবে।
দুধের মধ্যে কেসিন নামক একটি প্রোটিন থকে। তা হজম করতে খুব সমস্যা হয় বেশিরভাগ মানুষেরই। তার উপর চায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যাটেচিনের সঙ্গে কেসিনের বিক্রিয়া হলে শরীরে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। তাতে চিনি যোগ করলে ইনফ্ল্যামেশনের মাত্রা আরও বাড়ে।
গরমের দিনে যেই সকালে-বিকেলে আপনি দুধ-চিনি দেওয়া চা খাবেন, সঙ্গে সঙ্গে শরীর বাড়তি অ্যাসিড তৈরি করতে আরম্ভ করবে। সঙ্গে ভাজাভুজি থাকলে তো আর কথাই নেই! ফলে সামান্য চা হজম করতে গিয়েও শরীরের ভিতরের উত্তাপ বাড়বে।
তাই বলে কি দুধ চা খাওয়া একেবারে ছেড়ে দেবেন? মোটেই না! দিনে দু’বার খেতে পারেন। তবে খালি পেটে নয়। দিনের প্রথম চায়ে দুধ-চিন না মিশিয়ে সামান্য লেবু আর মধু দিতে পারেন। দুধ চায়ে আদা বা তেজপাতা দেওয়ার অভ্যেসটা নেহাত খারাপ নয় – তা হজমের পক্ষে সহায়ক।
যদি স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নশীল হন, তা হলে রাস্তার ধারের দোকান থেকে কাপের পর কাপ চা পান করার অভ্যেস ছাড়তে হবে। অতক্ষণ ফোটার পর চায়ের গুণের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না, যে মানের চা পাতা বা দুধ ব্যবহার করা হয়, তাও সন্দেহজনক। শীতের দিনে তবু চলতে পারে, গরমকালে তো নৈব নৈব চ। তেষ্টা মেটাতে কালো বা সবুজ চা ঠান্ডা করে বরফ ইত্যাদি মিশিয়েও খেতে পারেন