বাড়িতে যে সব আগুন লাগে, হিসেব বলছে তার ৭০% ক্ষেত্রে কারণ হচ্ছে রান্নার গ্যাস, খুব বড়ো ভূমিকা আছে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিটেরও। রান্না বসিয়ে বাথরুমে ঢুকে যাওয়া বা অন্য ঘরে চলে যাওয়ার অভ্যেস খুব খারাপ – কখন কোথা থেকে বিপদ হবে আপনি টেরও পাবেন না। প্রতিবার রান্নাঘরের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর গ্যাসের মেন নব অফ করে দিন। তাতে লিকেজের চান্স কমে। কোনও কারণে যদি মনে হয় গ্যাস লিক করছে, তা হলে সিলিন্ডার খুলে নিয়ে ঘরের বাইরে খোলা জায়গায় বের করে দিন।
ইলেকট্রিক লাইনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান মাঝে মাঝেই
ইলেকট্রিক লাইনের কোথাও কোনও ফুটোফাটা আছে কি? সেখানে দেওয়াল চুঁইয়ে জল ঢোকার কোনও চান্স আছে? বিশেষ করে যাঁদের বাড়ি বেশ পুরোনো, তাঁরা মাঝে-মধ্যেই লাইনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান সার্টিফায়েড ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে। শর্ট সার্কিট থেকে শুরু হওয়া আগুন কিন্তু জল ঢেলে নেভানো যায় না, বালি ছুড়তে হয় – সেটাও মনে রাখবেন।
গিজার, হিটার, আভেন থেকে সাবধান
জল গরম করার যন্ত্র বা হিট প্যাড যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁরা সাবধান। এই দু’টি থেকেই আগুন লাগতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের হিট প্যাড বা ইমারশন হিটার ব্যবহার করে সেঁক দেওয়ার অভ্যেস থাকে – সাবধান না হলে তা থেকে বিরাট বিপর্যয় হওয়া স্বাভাবিক। ঘুমের আগে কখনও এই দু’টির কোনওটি ব্যবহার করবেন না – ঘুমিয়ে পড়লে কেলেঙ্কারি হতে পারে। ব্যবহার না করলে যে কোনও ইলেকট্রিক যন্ত্রের বিদ্যুতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখুন।
পালানোর রাস্তা ঠিক করা আছে কী?
বাড়িতে কোথাও আগুন লাগলে কোন রাস্তায় পালাবেন, সেটা ঠিক করে রেখেছেন কী? এভাবে ভাবা আমাদের অভ্যেস নেই, কিন্তু বিপদে পড়লে কী করবেন, সেটা ভাবা থাকলে প্যানিক করাটা আটকাতে পারবেন। বাড়ির বাচ্চা-বুড়ো সকলের জানা দরকার রাস্তাটা।
ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখুন
হাতের কাছে আগুন নেভানোর জন্য একটা ফায়ার এক্সটিংগুইসার অবশ্যই রাখুন। পারলে ফায়ার ব্ল্যাঙ্কেটও রাখা উচিত। তা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটাও সবাই শিখে রাখবেন।
আগুন লাগলে কী কী করতে নেই
. আগুনে পুড়ে যত মানুষ মারা যান, তার চেয়ে বেশি যান দম বন্ধ হয়ে বা কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাবে। তাই আগুন আর ধোঁয়ার গ্রাস থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে মাথা নিচু করে গুড়ি মেরে থাকতে হবে, বেরোতেও হবে ওভাবেই। সোজা হাঁটবেন না, শরীর সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখুন।
. কখনও টাকাপয়সা, দস্তাবেজ বা মূল্যবান কোনও কিছুর জন্য ফিরে যাবেন না দুর্ঘটনাস্থলে। প্রাণ বাঁচিয়ে পালান, সঙ্গে মানুষ, পশুপাখি বা প্রিয় গাছ থাকলে সেগুলিকে নিন। টাকা পয়সা নেওয়া সম্ভব হলে ভালো, না হলে থাক। গায়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
. লিফট ব্যবহারের ভুলটা করবেন না কখনও। ইলেকট্রিক কানেকশন বিচ্ছিন্ন হলে লিফট আটকে যাবে, তার মধ্যে বিষাক্ত গ্যাস জমার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সব সময় সিঁড়ি দিয়ে নামুন। নিচে আগুন লেগেছে? খোলা ছাদে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
. হুট করে কোনও দরজা বা জানলা খুলতে যাবেন না, তাতে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে আগুন হু হু করে বাড়তে আরম্ভ করবে। যদি দরজা বা জানলার নবে হাত দিয়ে মনে হয় তা অত্যন্ত গরম হয়ে আছে, বা নিচ দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে — তা হলে খোলার চেষ্টাই করা উচিত নয়! তার মানেই হচ্ছে যে অন্য পারে আগুন অতি শক্তিশালী হয়ে অপেক্ষা করছে। দরজা খুললেই তা আরও জোরালো হবে।
. প্যানিক করবেন না। আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে খোলা জায়গায় যাওয়া। দ্বিতীয়, দমকলে খবর দেওয়া ও আশপাশের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাহায্য চাওয়া। সম্ভব হলে এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করে আগুন নেভানোর একটা চেষ্টা করতে পারেন।
. কোনও পরিস্থিতিতেই খাটের নিচে বা আলমারিতে লুকিয়ে পড়বেন না। চট করে আপনাকে খুঁজে বের করা যাবে না।
. ছোটোদের হাতের কাছে কোনও দাহ্য পদার্থ রাখবেন না।
কী কী করবেন
. আপনি যে ছোটো-বড়ো-ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বা ফ্ল্যাট বাড়িতেই থাকুন না কেন, ভারত সরকারের ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ফায়ার সেফটি রুল মানা হচ্ছে কিনা সেটা দেখে নিন। অনেকেই কিছু ঘুষ দিয়ে অনৈতিকভাবে প্ল্যান পাশ করিয়ে নেনে, কার্যত নিয়মের কিছুই মানা হয় না। সেই ফাঁদে পা দেওয়ার ভুলটা করবেন না যেন!
. বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভারে সব সময় পর্যাপ্ত জল রাখা উচিত।
. গ্যাসের কাছাকাছি ফ্রিজ রাখা অনুচিত। ইমারশন রড বা হিটারও রাখবেন না। আগুন বা তাপের উৎসগুলি যেন একে অপরের চেয়ে দূরে থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
. ঘরে ধূমপান করবেন না, বাজি পোড়াবেন না। মশা মারার ধূপ জ্বাললেও খুব সাবধান। আর বাচ্চার হাতের কাছে লাইটার, দেশলাই, জ্বলন্ত মোমবাতি বা