আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন শব্দ দু’টি এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় যদি ভেবে দেখেন, তা হলে বুঝতে পারবেন যা রোগ যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়ে, তাই এই ব্যবস্থা করা হয় এবং বিষয়টা একেবারেই সাময়িক। তাছাড়া ছেলেবেলায় চিকেন পক্স বা হাম হলেও এভাবেই কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হত রোগীকে – সুতরাং ব্যাপারটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইনের ফারাক
আপনি যদি কোনও কোভিড পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে থাকেন, বা তাঁর ছ’ফুটের মধ্যেও আসেন, তা হলে আপনার নিজেকে কোয়ারেন্টাইন করে নেওয়ার কথা। অর্থাৎ আগামী ১৫ দিন আপনি পরিবারের অন্য কারও কাছে আসবেন না, নিজেকে একটা ঘরে বন্দি করে রাখবেন। এর মধ্যে শরীরে রোগের লক্ষণ ফুটে উঠছে কিনা দেখতে হবে। না ফুটে উঠলেও সতর্ক থাকুন।
কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট এলে আপনাকে আইসোলেশনে থাকতে হবে। অর্থাৎ, কোনও কোভিড নেগেটিভ মানুষের সঙ্গে এক ঘর বা বাথরুম আপনি ব্যবহার করবেন না। আপনার বিছানা, ব্যবহৃত জামাকাপড়, থালাবাসনে অন্য কেউ হাত দেবেন না। আপনার ঘর পরিষ্কার করতেও হবে নিজেকেই।
যাঁরা অ্যাসিম্পটোম্যাটিক, তাঁদের হয়তো এতে খুব অসুবিধে হবে না। কিন্তু যাঁরা কোভিডের আক্রমণে কাহিল হয়ে পড়বেন, তাঁরা কাজ করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে বাড়ির অন্য কেউ তাঁকে পরিষেবা জোগাবেন, তবে খুব সাবধানে। মুখে ডাবল মাস্ক পরতে হবে। হাতে থাকবে গ্লাভস। কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আইসোলেশন ছেড়ে বেরনো যাবে না।
যদি পুরো পরিবারের সংক্রমণ হয়, কীভাবে আইসোলেশনে থাকবেন?
এক্ষেত্রে আইসোলেশনের প্রয়োজন নেই, সবার সংক্রমণ হলে একসঙ্গেই থাকতে পারেন। তবে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর আপনাকে ব্যবহৃত জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে যথাযথভাবে। খাবার, ওষুধপত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আনিয়ে নিন বাইরে থেকে, নো-কনট্যাক্ট ডেলিভারি অপশন নেওয়া উচিত।
যদি পরিবারের বেশিরভাগ লোকের সংক্রমণ হয়, দু’একজন বাদ পড়েন, তা হলে রিভার্স আইসোলেশন ট্রাই করা উচিত। অর্থাৎ, যিনি সুস্থ, তিনি নিজেকে ঘরে আটকে ফেলুন। বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ হলে তবেই বেরোবেন।
এই অবস্থায় বাইরে থেকে কেউ যেন বাড়িতে না ঢোকেন, তা দেখতে হবে। ঘরের কাজের যিনি সহায়ক, তাঁকেও ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
কোন কোন নিয়ম মেনে চলবেন?
. ডাক্তারকে জানান, তাঁর কথামতো চলুন।
. মুখে মাস্ক পরে থাকুন, বিশেষ করে যাঁদের হাঁচি-কাশি হচ্ছে। কনুইয়ে হাঁচবেন বা কাশবেন – হাতের পাতা ব্যবহার করবেন না।
. বার বার হাত ধুয়ে ফেলুন।
. যে সব সারফেসে হাত লাগছে, সেগুলি জীবাণুমুক্ত করুন স্যানিটাইজার দিয়ে।
. চশমা, রিমোট, খবরের কাগজ ব্যবহারের সময় সাবধান। অন্য কেউ হাত দেওয়ার আগে জীবাণুমুক্ত করে দিন অবশ্যই।
. সিগারেট খাবেন না – তা হলে সমস্যা বাড়বে, আপনার না হলেও পরিবারের অন্য আক্রান্তের অসুবিধে হবে।
. ঘরে এসি চালিয়ে বা জানলা বন্ধ করে থাকবেন না, জানলা খোলা রাখুন। বাতাস চলাচল করা জরুরি।
. পুষ্টিকর, সহজপাচ্য খাবার খান।