হ্যাঁ, আমরা খুব ভালো করেই জানি যে পিরিয়ড নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে সমাজে অনেক ছুঁৎমার্গ আছে। আর সেই কারণেই এ ব্যাপারটা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে আগ্রহী। ঋতুস্রাব একটি অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সে সময়ে যতটা সুস্থ, পরিচ্ছন্ন ও আরামে থাকা যায় ততই ভালো।
আপনি নারী হলে নিজেই নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন – বিন্দুমাত্র দ্বিধায় ভুগবেন না। যদি পাঠক পুরুষ হন, তা হলে মন থেকে দ্বিধা দূর করুন এবং আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহিলা যেন ওই কয়েকদিন শরীর ও মনের দিক থেকে সুস্থ থাকেন, সে বিষয়টা নিশ্চিত করুন।
পিরিয়ডের সময়ে প্যাড ব্যবহার করাটাই দস্তুর। নানা আকারের স্যানিটারি ন্যাপকিন মেলে বাজারে, এক এক রকম ফ্লো-এর জন্য এক এক ধরনের প্যাড ব্যবহার করা যায়। আজকাল পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং বায়ো ডিগ্রেডেবল প্যাডও কিনতে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে আপনার পুরোনো ব্র্যান্ডের বদলে এরকম কিছুও ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
কিন্তু এটাও ঠিক যে কোথাও ট্র্যাভেল করার সময়ে প্যাড অসুবিধের সৃষ্টি করতে পারে। যাঁরা সাঁতার কাটতে ভালোবাসেন বা নিয়মিত ওয়ার্কআউট করেন, তাঁরাও প্যাড নিয়ে নানা সমস্যায় ভোগেন। সব সময় প্যাড ঠিকমতো সুরক্ষা দিতেও পারে না – বিছানায়, পোশাকে দাগ লেগে যায় বিশ্রিভাবে।
স্যানিটারি প্যাড ছাড়াও বাজারে আরও দু’ ধরনের মেনস্ট্রুয়াল প্রডাক্ট মেলে। তার মধ্যে ট্যাম্পন অনেকদিন ধরেই আছে এবং পশ্চিমের উন্নত দেশে তার বহুল ব্যবহার হয়। কোনও রহস্যময় কারণে তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই মোটামুটি ট্যাম্পন নিয়ে নানা সংস্কার প্রচলিত আছে। তার মধ্যে প্রথমটি হল, ট্যাম্পন ব্যবহার করলে কুমারী মেয়েদের হাইমেন নষ্ট হয়ে যায়।
হাইমেন নিয়ে মাতামাতিটা এ যুগে এসে আর চলে না, কারণ মেয়েরা খেলাধুলো করে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, সাইকেল চাপে, বাইকে বা স্কুটিতে চড়ে – এ সবেই হাইমেন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ট্যাম্পন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বেশ আরামদায়ক, পিরিয়ডের অস্বস্তি টের পাওয়াই যায় না।
তবে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে – ভ্যাজাইনায় কোনও কিছু প্রবেশ করাতে গেলে কিশোরীর মনে বাড়তি চাপ পড়তে পারে। যাঁরা শৈশবে কখনও সেক্সুয়াল ভায়োলেশন সহ্য করেছেন, তাঁদেরও এ সমস্যা হতে পারে। তাই সে সব খেয়াল রেখে ট্যাম্পন ব্যবহার করা উচিত।
ট্যাম্পনের আর একটা সমস্যা আছে। তা থেকে টক্সিক শক সিনড্রোম নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে, তা থেকে মৃত্যু হওয়াও বিচিত্র নয়। তাই কখনওই টানা ট্যাম্পন পরার পরামর্শ দেওয়া হয় না, প্যাডের সঙ্গে মিলিয়ে-মিশিয়ে ব্যবহার করতে বলা হয়। তাছাড়া যদি সাধারণ ফ্লো-এর দিন কেউ হেভি ফ্লো সামলানোর জন্য নির্মিত ট্যাম্পন পরেন, তা হলে ভ্যাজাইনার ভিতরে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে।
এবার আসা যাক মেনস্ট্রুয়াল কাপের প্রসঙ্গে। ইদানীং এই বস্তুটি ব্যবহার বেড়েছে অনেকটাই। সিলিকন নির্মিত একটি কাপ প্রবেশ করানো হয় ভ্যাজাইনায়। কাপ ভরতে আন্দাজ ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। তারপর বের করে সেটি ধুয়ে আবার ব্যবহার করা যায়। ভালো মানের একটি কাপ টানা ১০ বছর ব্যবহার করা যায় বলে এটি পরিবেশবান্ধবও বটে।
কিন্তু কাপেরও কয়েকটি সমস্যা আছে। প্রথমত ভ্যাজাইনা দিয়ে এটি প্রবেশ করিয়ে যথাযথভাবে ফিট করানোর পদ্ধতিটা কঠিন। সবাই প্রথমেই পারবেন এমন নয়, অ্যাডজাস্ট করতেও সময় লেগে যায়। দ্বিতীয়ত, ট্যাম্পনের মতোই এটিও ফরেন বডি – সবাই তা ইনসার্ট করতে স্বচ্ছন্দবোধ না-ও করতে পারেন। তিন, যাঁরা ইনট্রা-ইউটেরাইন ডিভাইস পরেন, তাঁরা কোনওভাবে ভুল সুতোয় টান দিয়ে ফেললে সেটি খুলে যেতে পারে।
যাঁদের ফাইব্রয়েড আছে, তাঁদের কাপ পরলে অস্বচ্ছন্দবোধ হতে পারে। যাঁরা কিছুদিন আগে মা হয়েছেন, অ্যাবরশন হয়েছে বা সিলিকনে অ্যালার্জি আছে, তাঁদেরও মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার না করাই ভালো।
মনে রাখবেন
. আপনার স্বাচ্ছন্দ্য সবার আগে। ঋতুস্রাবের সময়ে কী ব্যবহার করলে আপনি মানসিকভাবে সব চাইতে ভালো জায়গায় থাকবেন, সেটা বোঝার জন্য আপনাকে ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
. দরকারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পিরিয়ড মানেই ব্যথা সহ্য করতে হবে – এমন মানসিকতা আঁকড়ে বসে থাকবেন না।
. বিজ্ঞাপনের মোহে ভুলবেন না। নিজের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আপনার আছে।