চারদিকে অক্সিজেন নিয়ে যা হাহাকার চলছে, তাতে আমাদের সবারই অল্পবিস্তর জ্ঞানশিক্ষা হয়েছে! আমরা বেশ বুঝতে পারছি, আগামীদিনেও অনেকটা সময় বাড়ির ভিতরেই থাকতে হবে। তাই ঘরের বাতাসে যদি একটু বেশি অক্সিজেন যোগ করা যায়, তা হলে ভালো হয় না? অনেকেই সেই আশাতেই গাছ লাগাচ্ছেন প্রাণ খুলে।
কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই আজকাল থাকেন ছোটো ছোটো ফ্ল্যাটবাড়িতে। তাই যে কোনও গাছ এনে ঘরে রাখলে তো হবে না – দেখতে হবে কোথায় আপনি গাছ রাখলে সুন্দর মানাবে, ক’টা টব রাখার জায়গা আছে গোটা বাড়িতে। তার পর দেখতে হবে সেই জায়গায় কোন কোন গাছ রাখলে তার বাড়-বৃদ্ধি বাধা পাবে না।
বেশিরভাগ ইন্ডোর প্লান্টের কিন্তু অল্পবিস্তর হলেও আলোর প্রয়োজন হয়ই, না হলে তার সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। জানলার পাটায় বা বারান্দায় যদি সকাল বা বিকেলের নরম রোদ পড়ে, তা হলে সেখানে গাছ রাখতে পারেন। না হলে মাঝে মাঝে গাছ বের করে রোদে দিতে হবে – চড়া রোদ নয়, নরম আলোয়। একান্ত সেটা সম্ভব না হলে আপনাকে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বাড়ির কাছাকাছি কোনও নার্সারি আছে? সেখান থেকে গাছ কিনলে আপনি সঙ্গে পরামর্শও পাবেন। তাতে গাছের দেখভাল করতে সুবিধে হবে। তা না হলেও প্রথমে কয়েকবার ভুল করতে করতে ঠিকটা শিখে ফেলবেন।
এবার সবচাইতে জরুরি প্রশ্ন, ঘরে গাছ রাখলে কি সত্যিই অক্সিজেনের জোগান বাড়ে? এ কথা ঠিক যে দিনের বেলায় যখন সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়া চলে, তখন গাছ অক্সিজেন ছাড়ে আর কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেয়। কিন্তু এক-আধটা গাছ থেকে আপনি বিরাট কিছু অক্সিজেন পাবেন না, সেটাও ঠিক।
রাতে কিন্তু গাছ স্বাভাবিক নিশ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, অক্সিজেন টানে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে আমার-আপনার মতোই – তাই শোয়ার ঘরে অনেক গাছ না রেখে এয়ার পিউরিফায়ার রাখুন। তবে কিছু অর্কিড বা সাকুলেন্ট রাতেও কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে – বেডরুমে সেগুলি রাখতে পারলেই ভালো।
ঘরে সবুজের ছোঁয়া মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই ঘরের হাওয়া শুদ্ধ হোক বা না হোক গাছ রাখার জায়গা বের করুন অবশ্যই! কোন কোন গাছ ঘরে ভালো লাগে জানতে চান?
স্নেক প্লান্ট – মেনটেন করা খুব সোজা, খুব কম জলেও বাঁচে। তবে আলোর কাছাকাছি রাখবেন। ঘরের বাতাসে বেনজিন, টলুইন, ফরমালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক কেমিকাল থাকলে তা টেনে নেবে এই গাছ।
মনস্টেরা – দশদিনে একবার জল দিলেই চলে, একবার গাছ ধরে গেলে বাড়ে তরতরিয়ে, দেখতেও খুব সুন্দর। যে সব জায়গায় সরাসরি রোদ আসে না, সেখানে ভালো হবে মনস্টেরা।
স্পাইডার প্লান্ট – ঝোপের মতো দেখতে। জানলায় বেশ কয়েকটা একসঙ্গে রাখলে বেশ একটা জঙ্গলের মতো ভাব আসে। এয়ার পিউরিফায়ার হিসেবেও কাজ করে।
রবার – যে জানলায় সকালে বা দুপুরে খানিকটা রোদ আসে, সেখানে খুব ভালো হবে রবারের গাছ। ঘরের সব কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেবে এবং বেশ হাত-পা ছড়িয়ে বাড়বে।
ফিলোডেনড্রন – চমৎকার লতা হয়, দেখভাল করাও খুব সহজ। উঁচু শেলফে বা হ্যাঙ্গিং প্লান্টারে খুব ভালো হবে। যাঁরা নতুন গাছ করছেন, তাঁরা এটি দিয়ে শুরু করতে পারেন।