সমস্যাটার একটা গালভরা নাম আছে – সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার। সাধারণত কৈশোর বয়স থেকে প্রকাশ পেতে আরম্ভ করে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কারও কারও কমে যায়, কেউ সারা জীবন এর ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোতে পারেন না। এমনিতে শারীরিক সমস্যা তেমন হয় না, কিন্তু মনের উপর নিদারুণ চাপ পড়ে – ক্ষেত্রবিশেষে সাহায্য নিতে হয় মনোবিদের।
আমাদের সমাজে সবচাইতে বড়ো সমস্যা হচ্ছে, আমরা মানসিক সমস্যাগুলোকে তেমন পাত্তা দিতেই অভ্যস্ত নই। যে মানুষটার লোকজনের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে অসুবিধে হয়, আমরা তাকে লাজুক বলে স্ট্যাম্প মেরে দিই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিটকিরি বা তির্যক কথাও হজম করতে হয়। আসলে কিন্তু সোশাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার থাকাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার – কেন্ডাল জেনারের মতো দুনিয়া কাঁপানো মডেল এই সমস্যায় ভোগেন, তা প্রকাশ্যে বলতেও দ্বিধা করেন না। তাই আপনার/ পরিচিত কারও এ অসুবিধে থাকলে তার পাশে দাঁড়ান, সাহায্য করুন।
কোন কোন লক্ষণ দেখে সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার চেনা যায়?
. অচেনা মানুষের সঙ্গে ফোনে বা মুখোমুখি কথা বলতে অসুবিধে হয়। এমনকী, দোকানে কেনাকাটা করতে গেলে বা অফিসের পার্টিতে যেতে হবে ভাবলেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, বুক ধড়ফড় করে।
. নতুন কারও সঙ্গে আলাপ করায় অনীহা, আলাপ হলেও কথা বলতে অসুবিধে হওয়া।
. সারাক্ষণ মনে হতে থাকবে যে কেউ নজরে রেখেছে – সব সময় দোষ-গুণের বিচার করছে। এই ধরনের মানুষরা রেস্তোরাঁ, বিয়েবাড়ি বা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে, জোরে হাসতে বা কোনও কিছু খেতেও অস্বস্তিবোধ করেন।
. মাঝে মাঝেই প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ ফুটে উঠবে শরীরে। হাত-পা কাঁপবে, চোখ-মুখ লাল হয়ে যাবে – বিশেষ করে পার্টি বা কোনও সামাজিক জমায়েতে ঢোকার আগের মুহূর্তে এমনটা হবে। এঁরা সাধারণত নানা বাহানা করে জমায়েত এড়িয়ে যেতে পছন্দ করেন।
. সোশ্যাল অ্যাংজাইটি অল্পবিস্তর অনেকেরই থাকে, কিন্তু যদি আপনার মনে হয় যে যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা তত বাড়ছে, তা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করবেন না। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জটিলতা বাড়বে, কমবে না। খুব বেশি হেলাফেলা করলে ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটির সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।
. সাধারণত ছোটো বাচ্চারাও অপরিচিত কারও কোলে ওঠে না, অচেনা মুখ দেখলে কান্নাকাটি করে। কিন্তু ধীরে ধীরে এ সমস্যা কেটেও যায়। যদি দেখেন যে স্কুলে, কলেজে গিয়েও এ সমস্যা কাটছে না, সামান্য সমালোচনা শুনেই সে গুটিয়ে যাচ্ছে, তা হলে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।