এমন কোনও পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কারও ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার বা হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর সব ক’টাই হচ্ছে আসলে সুখের অসুখ। শরীরের সারা দিনে যতটা প্রয়োজন, তার চাইতে বেশি খাবারের জোগান দেওয়া হলেই এই সমস্যাগুলি দানা বেঁধে উঠতে থাকে সাধারণত। বাড়তি ক্যালোরি শরীরে জমতে থাকে, ওজন বাড়ে, ক্রমশ একের পর এক অঙ্গ আক্রান্ত হয়ে পড়ে, দেখা দেয় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
তাই সুস্থ থাকতে চাইলে একেবারে সিম্পল খাওয়াদাওয়া করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। বিশেষ করে রান্নায় তেলের পরিমাণ কমাতেই হবে। এখানে একটা কথা বলা খুব জরুরি। আমাদের রোজের খাদ্যতালিকায় ফ্যাট থাকা একান্ত জরুরি, তা আমাদের নানা জরুরি শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগে।
কিন্তু তেল আর ফ্যাটে ফারাক আছে। কেন বলুন তো? কারণ ফ্যাট আপনি সরাসরি আমন্ড/ চিনাবাদাম/ নারকেল/ সরষে/ দুধের সর/ সূর্যমুখির বীজ থেকে পেয়ে যাবেন – কিন্তু প্রসেসিং ছাড়া তেল/ মাখন/ ঘি মিলবে না। আর প্রসেসড খাদ্যদ্রব্য স্বাস্থ্যের পক্ষে কখনও ভালো হয় না। তাই তেল, মাখন, ঘিয়ের ব্যাপারে সাবধান। যাঁরা হাই কোলেস্টেরল বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা বাদাম খাওয়ার আগেও একবার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
এবার সবচাইতে জরুরি প্রশ্ন – তেলের ব্যবহার কমানো যায় কীভাবে?
. প্রথমেই আপনাকে ভাজাভুজি বাদ দিতে হবে, তারপর রোজের রান্নার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা দরকার। সেটা কীভাবে সম্ভব? চিকেন বা মাটন প্রোটিনের উৎস হিসেবে খুব ভালো, কিন্তু রান্নার আগে যদি বাড়িতে পাতা দই দিয়ে সেটা ম্যারিনেট করে রাখা যায়, তা হলে খুব কম তেলেও রান্না করা সম্ভব। মাছের নানা ধরনের ভাপা বা পাতুরি গোছের পদ আছে, তেমন কিছু খুঁজে বের করে ট্রাই করুন। খুব সামান্য তেলে পরোটা বা বেগুন/পটল ভাজা যায় নন স্টিক প্যানে – দরকারে এই ধরনের বাসন কিনুন।
. নানা সবজি রোস্ট বা বেক করে নিতে পারেন আভেনে, আজকাল এয়ার ফ্রায়ারের ব্যবহারও অনেক বেড়েছে – শোনা যায় এই পদ্ধতিতে রান্না করলে খেতেও ভালো লাগে। একেবারে তেল বাদ দেওয়ার চাইতে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা বরং অনেক সহজ, বদলে ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড, সূর্যমুখি বা কুমড়োর বীজ, তিল রাখুন রোজের খাদ্যতালিকায় – তাতে ফ্যাটের প্রয়োজন মিটবে, স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
. সব সময়ে বেশি দাম দিয়ে হলেও ভালো মানের তেল কিনুন।
. একবার ভাজাভুজির পর বাড়তি তেল রয়ে গেলে পরদিন সেটা আবার ব্যবহার করে নেন? বার বার ঠান্ডা আর গরম হতে থাকলে তেলের রাসায়নিক গঠন বদলে যায় এবং তা স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে ওঠে। তাই একবার গরম হয়ে ওঠা তেল বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করুন।
. বিকেলের খিদে মেটাতেই মানুষ সবচাইতে বেশি ভাজাভুজি খান। চপ, সিঙাড়ার তেলটা চোখে দেখা যায়, কিন্তু প্যাকেটবন্দি ঝুরিভাজা, ডায়েট চিড়ে ইত্যাদির উপরেও খুব বেশি আস্থা রাখার কারণ নেই – সেগুলিও একইরকম ক্ষতিকারক। বিকেলে কী খাবেন, সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখুন।