ভোজ্য তেলের বাজার কঠিন সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এই শিল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা আন্দাজ করছেন যে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই অন্তত ১৫% থেকে ২০% বাড়বে ভোজ্য তেলের দাম। পরবর্তীকালে পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও বাড়লেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কোনও খাদ্যসমস্যার শুরুতে কিছু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে বেশি বেশি করে তা কিনতে আরম্ভ করেন — রান্নার তেলের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে। এর ফলে চাহিদা আর জোগানের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে।
কোভিডের আগে ভারতের বাজারে রান্নার তেলের যা দাম ছিল, তার তুলনায় এখন অনেকটাই বেশি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের থেকে সানফ্লাওয়ার তেলের দাম বেড়েছে ৫০%, সোয়াবিন তেলের দাম অন্তত ২০%। এর উপর আবার ১৫%-২০% বাড়লে গৃহস্থের বাজেটে টানাটানি পড়বেই। তার চাইতেও বড়ো কথা, কবে যে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা মোটেই বোঝা যাচ্ছে না।
এ দেশের বাজারে যে সূর্যমুখি তেল বিক্রি হয়, তার বেশিরভাগটাই আসত ইউক্রেন থেকে – সেখানে যে কবে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে চাষ-আবাদ শুরু হবে তা মোটেই বোঝা যাচ্ছে না। কৃষ্ণসাগরের আশপাশের কয়েকটি জায়গা থেকেও ভারত সূর্যমুখি তেল কিনত, আপাতত রাশিয়া-ইউক্রেনের রাস্তা বন্ধ থাকায় সেখান থেকেও আমদানি করা যাচ্ছে না।
তার মধ্যে আবার পাম তেলের সর্ববৃহৎ উৎপাদক ইন্দোনেশিয়া ২৮ এপ্রিল থেকে ভোজ্য তেল ও সেই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কাঁচামালের রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। ইন্দোনেশিয়ার বাজারেই রান্নার তেলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, জৈব জ্বালানি হিসেবেও পাম তেল ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে – তাই দেশের তৈরি তেল তারা আর আন্তর্জাতিক বাজারে না বেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কানাডা থেকে বিশ্বের বাজারে ক্যানোলা আর রেপসিড তেলের একটা জোগান আসে – সেখানে গত দু’ বছর অত্যধিক গরম পড়ে খরা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, ফসল নষ্ট হয়েছে। একই কারণে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনায় ক্ষতি হয়েছে সয়াবিনের।
এর ফলটা হবে সুদূরপ্রসারী। রান্নার তেলের দাম বাড়লে স্রেফ গৃহস্থের পকেটে চাপ পড়বে না, ক্ষতি হবে আরও অনেক ব্যবসার। দাম বাড়তে পারে ন্যুডল, বিস্কিট, কেক-পেস্ট্রি, চকোলেট, আইসক্রিম, মারজারিন এমন আরও হাজারো প্রডাক্টের। বিরিয়ানি বা চপ-কাটলেট হয়ে উঠবে মহার্ঘ্য। ছোটো ফুড স্টল, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা সবে লাভের মুখ দেখতে আরম্ভ করেছিলেন, কপালে হাত পড়েছে তাঁদেরও।
বুঝতে পারছেন না, এই পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবেন? নতুন রেসিপি খুঁজে বের করুন। সব রান্নায় অনেক তেল লাগে না – বিশেষ করে ভাপা বা রোস্ট করে নিলে অল্প তেলেই কাজ চলে যায়। পাশাপাশি তা শরীরও ভালো রাখে।