গরমকাল মানেই ঠান্ডা জল, আইসক্রিম, দই, কোল্ড কফি, বরফ দেওয়া শরবত – তাই না? বিশেষ করে সারা দিনের ক্লান্তি আর তেষ্টা মেটাতে ফ্রিজে রাখা বরফঠান্ডা জলের তো জবাব নেই! এক গেলাস খেলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু সত্যিই কি ঠান্ডা জল বা শরবত আমাদের ঠান্ডা রাখে?
. শুনলে হয়তো আশ্চর্য লাগবে, কিন্তু বিজ্ঞান কি বলে জানেন? শরীরকে তুরন্ত শীতল করতে চাইলে বরফ দেওয়া জল নয়, এক গেলাস গরম পানীয় অনেক বেশি কার্যকর হবে। কীভাবে বলুন তো? গরম পানীয় শরীরে গেলে শরীর গরম হয়, তাকে ঠান্ডা করার জন্য ঘাম বেরোতে আরম্ভ করে। সেই অবস্থায় যদি আপনি পাখার তলায় বসেন, তা হলে ঘাম বাষ্পীভূত হয়ে ত্বকে শীতলতা অনুভূত হবে – সেই বোধ রক্তস্রোতের মাধ্যমে চারিয়ে যাবে শিরায় শিরায়। ফলে কমবে শরীরের তাপমাত্রা।
. আপনি যদি ঝাল খান, তা হলেও কিন্তু মোটামুটি একই এফেক্ট হবে! ঝাল খাবার আপনার জিভ আর গলায় অবস্থিত রিসেপ্টরগুলিকে উত্তেজিত করে তুলবে। তার ফলে ঘাম বেরোবে – তখন যত ইচ্ছে পাখা বা এসির হাওয়া খান না, আরামই আরাম! আর আপনি এতদিন বুঝতেই পারতেই না, রাজস্থান বা অন্ধ্রের মতো মারাত্মক গরম জায়গাকার লোকজন অত ঝাল খায় কেন? উত্তরটা সিম্পল – ঠান্ডা থাকবে বলে!
. মানুষ উষ্ণ রক্তের প্রাণী, নানা শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য খানিকটা তাপ তৈরি হবেই তার শরীরের ভিতরে। সেই কারণে আপনি ঠান্ডা জল বা আইসক্রিম দিয়ে শরীর ঠান্ডা করতে পারবেন না কিছুতেই। উলটে ভিতরে যাওয়ার পর সেগুলিই গরম হতে আরম্ভ করবে। যদি সারাদিন ঠান্ডা জল খেতে থাকেন, তা হলে মেটাবলিজমে তার প্রভাব পড়বে, তা স্লো হয়ে আসবে। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
. গরমকালে ঠান্ডা থাকার জন্য যাঁরা চিলড বিয়ারে আস্থা রাখেন, তাঁরা জেনে রাখুন বিয়ার হচ্ছে ডাইইউরেটিক। খাওয়ার খানিক বাদেই আপনাকে টয়লেট যেতে হবে, প্রস্রাবের মাধ্যবে বাড়তি জল বেরিয়ে গেলে ঘাম হবে না। ফলে শরীর ঠান্ডাও হবে না!
. তবে যদি আপনি পালস পয়েন্ট খানিকক্ষণ ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রাখতে পারেন, তা হলে শরীরের তাপমাত্রা নিশ্চিতভাবেই কমবে। দুটো মগে বরফ দেওয়া জল নিন, কবজি পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখে দিন ৩০ সেকেন্ড – দেখবেন কেমন আরাম লাগে!
. আমরা কিন্তু একবারও বলিনি যে আইসক্রিম বা ঠান্ডা শরবত খাবেন না। নিজের ইচ্ছেগুলোকে মেরে ফেলার কোনও দরকার নেই – এক-আধবার খেতেই পারেন। তবে বার বার আইসক্রিম খেলে শরীরে কতটা বাড়তি ক্যালোরি ঢুকছে, সেই হিসেবটাও রাখা উচিত। আর খুব রোদ্দুরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিঙ্ক ঢকঢক করে খাবেন না – বাইরের গরমে শরীরও বেশি গরম হয়ে থাকবে, তার মধ্যে ঠান্ডা পড়লে সর্দি-গর্মি হতে বাধ্য!