‘ল্যানসেট’ পত্রিকার করা একটি সমীক্ষা বলছে, ভারতবর্ষের ৩০% মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তাঁরা হাইপারটেনশনের রোগী। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ICMR সমর্থিত এই সমীক্ষায় আরও জানা গিয়েছে যে গত ৩০ বছরে এই সংখ্যাটা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
গোটা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই ছবিটা মোটামুটি এক, তবে ভারতে হাইপারটেনশনের রোগীর আসল সংখ্যা আরও বেশ খানিকটা বেশি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ যেহেতু হাইপারটেনশনের লক্ষণ মানুশের শরীরে সেভাবে ফুটে ওঠে না, তাই গোড়ায় কেউ পরীক্ষাও করায় না। বলা হয়, যতজন হাইপারটেনশনে ভোগেন, তার অর্ধেকের ধরা পড়ে। যতজনের ধরা পড়ে, তার অর্ধেকের চিকিৎসা হয় ও রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে।
হাইপারটেনশন কী? হয়ই বা কেন?
আমাদের হার্ট অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পাম্প করছে প্রতি হৃদস্পন্দনে, তা রক্তবাহীর নালীর মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। নালীর মধ্যে রক্তের একটা চাপ সারাক্ষণ থাকেই। প্রতিবার রক্ত পাম্প করতে গিয়ে হার্টকে যদি বেশি পরিশ্রম করতে হয়, তাহলে এই নালীর দেওয়ালে বেশি চাপ পড়ে।
দীর্ঘদিন তেমনটা চলতে থাকলে ধমনী, শিরা, ক্যাপিলারি – সব ধরনের রক্তবাহী নালীর দেওয়ালই নমনীয়তা হারায়, কঠিন হয়ে যায়। ফলে বাড়ে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি সমস্যার শঙ্কা।
সমস্যা হচ্ছে, হাইপারটেনশনের আসল কারণ কী, সেটা এখনও নির্দিষ্ট করা যায়নি। প্রাইমারি হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে বংশগতির ধারা একটা মুখ্য কারণ। যাঁরা অত্যধিক ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যেস তৈরি করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আশঙ্কা বেশি। ওজন বেশি হলে বা এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে, নড়াচড়া না করলেও হাইপারটেনশন হতে পারে।
খাবারে অতিমাত্রায় নুন থাকলে বা প্যাকেটবন্দি নোনতা খাবারে আসক্ত হলেও কিন্তু হাইপারটেনশনের আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘদিন বার্থ কন্ট্রোল পিল নেওয়ার অভ্যেসের কারণে তা হতে পারে, কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায় অনেকের। কিডনিতে ক্রনিক কোনও সমস্যা থাকলে, ডায়াবেটিস বা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগলেও কিন্তু সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন হতে পারে।
কীভাবে হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়?
প্রাইমারি হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপনাকে কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে হবে।
. নুন খাওয়া কমান। চিপস, চানাচুর, সোয়া সস-সহ সব ধরনের প্যাকেটবন্দি সস, আচার, প্যাকেটের রেডি টু ইট খাবার, কেক-পেস্ট্রি, মাখন – সবেতেই প্রচুর নুন থাকে। বেশি নুন বা সোডিয়াম শরীরে গেলে পটাশিয়ামের ভারসাম্যেও পরিবর্তন আসে। তাই নুন কমানো ছাড়া উপায় নেই।
. হাঁটাচলা করতে হবে – যত অ্যাকটিভ থাকবেন, তত ভালো। বসে থাকলেই সুগার-প্রেশার-কোলেস্টেরল সব বাড়বে। বয়স বেড়েছে বলেই একেবারে শুয়ে-বসে দিন কাটাবেন না। বয়স বাড়লে প্রেশার বাড়বেই – তাই বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করুন।
. ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাছ বা মাংস একেবারেই চলবে না। ফল, সবজি সেদ্ধ খান বেশি করে।
. মদ্যপান, ধূমপান বা কোনও নেশার কবলে পড়লে সাবধান। আপনার প্রেশার কমাতে খুব অসুবিধে হবে।
. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ওবেসিটি আর হাইপারটেনশনের কম্বিনেশন খুব খারাপ।