আজকাল বেশিরভাগ বাড়িতেই একটি বা বড়োজোর দু’টি শিশু – পরিবারের বাকি সকলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের চোখে হারায়। বাচ্চার মুখ থেকে কথা খসার আগেই হাজির হয়ে যায় তার পছন্দের জিনিস, কিন্তু তাতেও সব সময়ে বাচ্চা সামলানো যাচ্ছে না– তার রাগ আর জেদের ঠেলায় পরিবারের বড়োদের জীবন ওষ্ঠাগত প্রায়! আপনার বাড়িতেও কি এ সমস্যা আছে?
ছোটো শিশুরা যখন কথা বলতে পারে না, তখন নিজেদের বিরক্তি, অসহায়তা ইত্যাদি প্রকাশের জন্য তারা চিৎকার করে, কান্না জোড়ে – শরীরের মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের চেষ্টা করে। তাই ৪-৫ বছরের বাচ্চা বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে কাউকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে বা কারও সঙ্গে মতের অমিল হলে চিৎকার করে কান্নাকাটি করেছে – এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই, এমনটা হতেই পারে এক-আধবার।
কিন্তু কথা বলতে শেখার পরেও যদি বাচ্চার ব্যবহারে পরিবর্তন না আসে বা অন্য কারও সঙ্গে মতের সামান্য অমিল হলেই সে মেজাজ হারাতে আরম্ভ করে, তা হলে কিন্তু সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে স্কুলে, কোনও পার্টিতে বা পাড়ার পার্কে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে থাকলে যদি শিশুর ব্যবহারে বারবার অ্যাগ্রেশন ফুটে ওঠে, লেখাপড়ায় সমস্যা হয় এবং বাড়িতেও তার ব্যবহার খাপছাড়া হতে আরম্ভ করে, তা হলে ব্যাপারটা হালকাভাবে নেবেন না। অনেকেই শিশুর এই ধরনের কান্ডকারখানাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না, ‘আহা, আমাদের বাচ্চা একটু জেদি’ বলে সমস্যাটা ধামাচাপা দিয়ে রাখেন – এই অ্যাপ্রোচে কিন্তু কাজ হবে না মোটেই।
কেন বাচ্চারা রাগি, বদমেজাজি হয়ে যায়?
আপনার বাচ্চার ক্ষেত্রে কেন এমনটা হচ্ছে, তা বোঝার জন্য পেডিয়াট্রিশিয়ানের সঙ্গে একবার কথা বলুন অতি অবশ্যই। তেমন সমস্যা দেখলে তিনিই মনোবিদের সঙ্গে কাউন্সেলিং করানোর পরামর্শ দেবেন। বাচ্চার কাউন্সেলিং করাতে হবে শুনলে অধিকাংশ মা-বাবাই পিছিয়ে যান – সেই ভুলটা করবেন না। রাগ কমাতে কাউন্সেলিং দারুণ কাজে দেয়। বিশেষ করে পেডিয়াট্রিক সাইকোলজিস্টরা এই সমস্যায় ত্রাতা হয়ে উঠতে পারেন।
সাধারণত এই ধরনের ব্যবহারের পিছনে কয়েকটি সাধারণ সমস্যা থাকে। শিশুর মধ্যে কোনও কারণে অ্যাংজাইটি তৈরি হলে, সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে, বা কোনও লার্নিং ডিসএবিলিটি থাকলে বাড়তি অ্যাগ্রেশন তৈরি হতে পারে। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি, ডিসলেক্সিয়া বা অটিজম আক্রান্ত শিশুদেরও রাগের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না – আপনার শিশুরও তেমন কোনও অসুবিধে আছে কিনা দেখে নিন।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে কী করবেন?
. বাড়িতে শিশুর সঙ্গে যিনি সর্বক্ষণ থাকেন, তাঁকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। তার অহেতুক বায়না কোনও অবস্থাতেই মেনে নেবেন না।
. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন – বাচ্চার হাত থেকে ফোন/ ল্যাপটপ/ ট্যাব কেড়ে নিলেই যদি সে মেজাজ হারায়, তা হলে বুঝতে হবে তার অ্যাডিকশন তৈরি হচ্ছে। ছোটোবেলা থেকে কোনও নেশাই যেন চেপে না বসে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অভিভাবকদের।
. কোন পরিস্থিতি বাচ্চার রাগ বাড়ায় তা বোঝার চেষ্টা করুন। সেই সময় তার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাকে বোঝাতে হবে কথা বললে বা আলোচনা করলেও মেজাজ শান্ত হয়ে আসে।
. বাচ্চা ভালো ব্যবহার করলে, সহবত মেনে চললে তার প্রশংসা করুন। শিশুরা প্রশংসা পেলে উৎসাহ পায় ও সেই কাজটাই বারবার করার চেষ্টা করে।