সামান্য অবহেলায় চলে গেল তাজা দুটো প্রাণ – কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যে লেকে রোয়িং প্র্যাকটিস করতে গিয়ে শহরের অন্যতম নামী স্কুলের দুটি কিশোরের বেঘোরে মৃত্যুর ধাক্কা এখনও সামলে ওঠেনি কলকাতা শহর। একটু তলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবেন, নিরাপত্তার এমন অনেক ফাঁক গলে আমরা নিজেরাই বাচ্চাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিই রোজ। প্রকৃতি কোনও ভুল ক্ষমা করে না – এ কথা খেয়াল রাখবেন। তাই বাচ্চাকে জলে ছাড়ার আগে অবশ্যই কয়েকটি সুরক্ষাবিধি মেনে চলা উচিত।
১. পুল, লেক, বিচ – সর্বত্র বিপদ হতে পারে, খুব ভালো সাঁতার না জানলে একা জলে নামবেন না। বাচ্চাকেও নামতে দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। এমন জায়গায় সাঁতার কাটুন যেখানে প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড আছেন। কথাটা অনেকেরই হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্তু প্রতি বছর গোটা পৃথিবীর নানা প্রান্তে সাঁতার জানা বহু মানুষ জলে ডুবে মারা যান, তা জানেন? গ্রামের বাড়িতে গেলে যাঁরা পুকুরে বা নদীতে স্নান করেন, তাঁরাও সঙ্গে কেউ থাকলে তবেই জলে নামুন।
২. খুব ভালো সাঁতার না জানলে এবং নিয়মিত প্র্যাকটিসের মধ্যে না থাকলে সমুদ্র বা নদীতে সাঁতার কাটবেন না। জোয়ারের সময়ে নদীর চেহারা বদলে যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। তখন সাঁতরেও বিশেষ কিছু করে উঠতে পারবেন না। যদি কখনও বিরাট ঢেউ বা স্রোতের মুখে পড়েন, তা হলে ভেসে থাকুন, ওই অবস্থায় হাত-পা ছুঁড়েও কিছু হবে না। স্রোতের টান একটু কমলে সাঁতার কাটতে হয়।
৩. আকাশে মেঘ জমেছে? সকাল থেকে বেজায় গরম, দুপুরের দিকে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে? সাঁতার, ওয়াটারপোলো, রোয়িং ক্লাস থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখুন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবহাওয়া বদলায়, বাতাসের গতি বেড়ে যায়। সাঁতার জানলেও তখন কিছু করে ওঠা যায় না। ইন্ডোর পুল হলে অবশ্য আলাদা কথা, সেখানে ঝুঁকি কম।
৪. বাচ্চা বোটিং বা রোয়িং ক্লাসে যায়? সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট পরান। চোখ রাখুন আবহাওয়ার খবরের দিকে – হাওয়ার গতি বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও বোটিং করতে গিয়ে বিপর্যয় হতে পারে।
৫. সাঁতার, বোটিং, ওয়াটারপোলো, রোয়িং ইত্যাদি ক্লাসে অতি অবশ্যই প্রশিক্ষিত লাইফগার্ড থাকা উচিত, উদ্ধার কার্যে তাঁদের ট্রেনিং থাকা বাধ্যতামূলক। সিপিআর এবং সাধারণ ফার্স্ট এডের ব্যবস্থা রাখতে হবে ক্লাবকে। আচমকা বিপদে পড়লে তারা ছাত্রদের কীভাবে রেসকিউ করবে সে সম্পর্কে গাইডলাইন থাকতে হবে – এর কোনওটা অনুপস্থিত হলেও পিছিয়ে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।