মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ইদানীং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেকটাই বেড়েছে। তেমনই আবার তৈরি হয়েছে কিছু ভুল ধারণাও। অনেকেই সাধারণ মন খারাপ আর ডিপ্রেশনের পার্থক্যটা বুঝতে পারেন না, উলটে এমন সব মন্তব্য করে বসেন যে ডিপ্রেশনে ভোগা রোগীর যাতনা বাড়ে। তাই কয়েকটা বিষয় বুঝে নেওয়া একান্ত দরকার।
. পৃথিবীর সবচাইতে সুখি মানুষেরও মন খারাপ হতে পারে। সংসারে অশান্তি, অসুখ-বিসুখ, প্রিয়জনের মৃত্যু, সম্পর্কে ভাঙন, চাকরি চলে যাওয়া, পরীক্ষার খারাপ ফল, ইত্যাদি নানা কারণে দুঃখ হতে পারে। কিন্তু সাধারণত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দুঃখের বোধটা কমে। অনেক সময় কান্নাকাটি করলে বা রাতে ঘুমিয়ে নিলে পরদিন বেশ ঝরঝরে লাগে। বন্ধুবান্ধব বা বাড়ির সবার সঙ্গে খানিকটা সময় কাটালেও মন খারাপ ভাবটা কাটতে আরম্ভ করে।
. ডিপ্রেশন কিন্তু একটা অসুখ – তার নিরাময় এত সহজ নয়। চিকিৎসা করাতে দেরি হলে আপনার স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে। বিছানা থেকে উঠতে পারবেন না, রোজের কাজকর্ম করার ইচ্ছেটাও মরে যাবে ধীরে ধীরে। হাসি, কান্না, খিদের মতো বোধগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবেন ধীরে ধীরে। ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যাটা সুইসাইডের দিকেও যেতে পারে।
. ভুলেও ভাববেন না যে ডিপ্রেশনে ভোগাটা বিলাসিতা – তা স্রেফ সমাজের উঁচুতলার মানুষের সমস্যা। ধন-মান-বয়স-সামাজিক অবস্থান কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে আক্রমণ হানতে পারে এই রোগ। আপনি হয়তো ভাবছেন যে কই, বাড়ির কাজের সহায়ক, রিক্সাওয়ালা বা বাজারে রোজের আনাজ নিয়ে বসা মানুষটির তো ডিপ্রেশন হয় না! এমন ভাবাটা বাতুলতা – অনেকে হলেও তা প্রকাশ করতে লজ্জা পান বা নেশার আশ্রয় নেন। তাই কোনও অবস্থাতেই কারও মানসিক সমস্যাকে ছোটো করে দেখবেন না, জানতে পারলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
ডাক্তাররা বলেন, টানা সপ্তাহ দুয়েক নিচের লক্ষণের মধ্যে পাঁচটি কারও মধ্যে দেখা গেলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এটা অসুখ, চিকিৎসা হলেই সেরে যাবে। তাই দেরি করবেন না, লজ্জা পাওয়ার তো প্রশ্নই নেই!
. দিনের পর দিন রাতে ঘুম না আসা। অনেকের আবার ঘুম এমন বেড়ে যায় যে রোজের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে আরম্ভ করে।
. মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ও সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধে।
. এনার্জির অভাব, সারাদিন ক্লান্তিভাব।
. আচমকা ওজন বাড়া বা কমা।
. রোজের কাজকর্মের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা – মোটিভেশনের অভাব।
. হতাশা আর দুঃখের ঘেরাটোপে আটকে থাকা, কিছুতেই সে চক্র থেকে বেরোতে পারবেন না।
. বার বার মৃত্যুচিন্তা ঘুরে-ফিরে আসবে।
. মদ, ড্রাগস, সিগারেটের মতো কোনও নেশার প্রতি আসক্তি।
সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং আর ওষুধপত্রের সাহায্যে ডিপ্রেশনের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই হতাশ হবেন না, ডাক্তারের সাহায্য নিন।