‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, গত দু’ বছরে সমগ্র মানবজাতির উপর কোভিড নামক যে প্রলয় নেমে এসেছে, তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে সবারই স্বাস্থ্য কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানতে চান কীভাবে?
চুল
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চুলের স্বাস্থ্য। কোভিডে ভুগে ওঠার পরে চুল পড়তে আরম্ভ করেছে কম-বেশি সবার। বিশেষ করে স্বাদগন্ধ চলে যাওয়ায় যাঁরা দীর্ঘদিন ভালো করে খেতে পারেননি, বা ধুম জ্বর এসেছে বারবার, তাঁদের চুলে পুষ্টির বিরাট ঘাটতি হয়েছে। যাঁদের পরিবারে কারও কোভিড হয়েছে, তাঁরাও মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসে ভুগেছেন এবং চুল পড়া বেড়েছে।
লকডাউনে পরিবারের থেকে দূরে অন্য শহরে আটকে পড়েছেন? রাতের পর রাত জেগে কাজ করেছেন বা ওয়েব সিরিজ দেখেছেন? আপনার চুলের স্বাস্থ্যও কম-বেশি খারাপ হয়েছে।
তবে যে মুহূর্তে আপনি স্বাস্থ্যকর জীবনচর্যায় ফিরবেন, সেই মুহূর্ত থেকেই ফের চুল তার হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পাবে। বেকার স্ট্রেস করবেন না, খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর রাখুন। ভালো করে ঘুমোন, রাতে জেগে দিনে ঘুমোলে কিন্তু চুলের স্বাস্থ্য ভালো হবে না। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়াটাও পারলে এড়িয়ে চলুন।
চোখ
কোভিড হয়তো চলে যাবে একদিন, কিন্তু তা আমাদের চোখের স্বাস্থ্যের পাকাপাকি ক্ষতি করে দেবে – এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দীর্ঘক্ষণ ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের ভিতরটা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। টানা অনেকক্ষণ চখের খুব কাছে থাকা কোনও কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকলে প্লাস পাওয়ার বাড়ে – নষ্ট হয় near vision। কোভিডের পর থেকে ঠিক তাই হচ্ছে।
টানা স্ক্রিনের দিকে তাকাবেন না। যাঁদের অনেকক্ষণ ল্যাপটপ বা ফোনে কাজ করতে হয়, তাঁরা মাঝে মাঝে দৃষ্টি সরিয়ে বাইরের দিকে তাকান। বার বার চোখের পাতা ফেলুন। সম্ভব হলে বড়ো টিভিতে ওয়েব সিরিজ বা সিনেমা দেখুন – ফোনে নয়।
দাঁত
দাঁতের স্বাস্থ্যহানির পিছনে প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো আছেই। তা ছাড়াও বহু মানুষ লকডাউন চলাকালীন দাঁত বা মুখগহ্বরের কোনও সমস্যা নিয়ে ডেন্টিস্টের কাছে যাননি – ফলে যেগুলি একেবারে গোড়ার দিকে ধরা পড়লে সহজেই সামলানো যেত, সেই সব রোগ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই।
তা ছাড়াও দেখা গিয়েছে যে, মানুষের দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া বা চিড় খাওয়ার সমস্যাও বেড়েছে। একদল বিশেষজ্ঞের ধারণা, দীর্ঘ সময় ধরে অনেকেই দাঁতে দাঁত পিষেছেন – তাই নাকি এমনটা হয়েছে!
হার্ট
উলটোপালটা খাওয়া, ব্যায়াম না করে ঘরের কোণে আটকে থাকা, অতিরিক্ত ধূম বা মদ্যপানের কারণে হার্টের খুব ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত যাঁদের আগে থেকেই সমস্যা ছিল, তাঁরা দীর্ঘদিন চেকআপ না করানোয় সমস্যা ঘনীভূত হয়েছে। স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যর হারও বেড়েছে অনেকটাই।
ত্বক
একজিমা, সোরিয়াসিস, রোজেশিয়ার মতো সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, স্ট্রেস বাড়ার কারণে তাঁদের ত্বকের সমস্যা বেড়েছে। বার বার হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজ করার কারণে বেড়েছে ত্বকের রুক্ষতা। হাত ধোয়ার পর ময়েশ্চরাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
লিভার
দেখা গিয়েছে যে, ঘরে আটকে পড়ার পর বহু মানুষ মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করতেন প্যানডেমিকের আগেই, তাঁদের সমস্যা অনেকগুণ বেড়েছে। উইথড্রয়াল সিমটম, রক্তক্ষরণের মতো সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ।
পেট
বেড়েছে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, গ্যাস-অম্বলের প্রবলেম। অনেক সময়েই ছোটোখাটো অসুবিধেগুলোকে পাত্তা না দেওয়ার কারণে তা সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে।
পা
দীর্ঘদিন যথেষ্ট মুভমেন্ট না হওয়ার কারণে অনেকেরই পায়ের শেপ গিয়েছে বিগড়ে – জুতোও আর ঠিকঠাক ফিট করছে না। অফিসে বা স্কুলে যাওয়া হত যখন, তখন ঢাকা জুতো পরে অনেকক্ষণ থাকতেন সবাই। বাচ্চারা অনেকদিন জুতো পরেইনি – তাই তাদের পায়ের আকার বদলেছেও বেশি।