জরা আর মৃত্যু জীবনের সঙ্গে খুব গভীরভাবে যুক্ত বিষয়। এ দু’য়ের মার কেউই এড়াতে পারেন না। প্রাণ চলে যাওয়ার মুহূর্তটা ঠিক কেমন হয়? যুগ যুগ ধরে তা ভাবিয়েছে মানুষকে। হালেও বহু গবেষণা চলছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের ইনস্টিটিউট অফ হেলদি এজিংয়ের অধিকর্তা ডেভিড জেমসের অধীনে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এই বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন অনেকদিন।
জানা গিয়েছে, এঁরা একটি বিশেষ ধরনের গোলকৃমির উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, ঠিক প্রাণ চলে যাওয়ার আগের মুহূর্তে কৃমিটির শরীরে উজ্জ্বল নীল আলোর বিস্ফোরণ হয়। আরও পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, লাইপোফাসিন নামক একটি পিগমেন্ট বা রঞ্জক এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। অক্সিডেশনের কারণে অনেক কোষের ফ্যাট আর প্রোটিন একসঙ্গে নষ্ট হয়ে গেলে এমন নীলাভ আভা তৈরি হতে পারে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীরাও যখন জরা বা বার্ধক্যের কবলে পড়ে, তখন এভাবেই ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে কোষের ফ্যাট আর প্রোটিন। তবে তার সঙ্গে একেবারে মৃত্যু মুহূর্তের বিপুল অক্সিডেশনের পার্থক্য আছে। জেমস ও তাঁর অধীনস্থ গবেষকরা দেখেছেন যে, অন্য কোনও অক্সিডেশন এত কোষকে একসঙ্গে মেরে ফেলতে পারে না।
গোলকৃমির ক্ষেত্রে মৃত্যু শুরু হয় তার অন্ত্রে। একটি কোষ মৃত্যু মুহূর্তে ক্যালশিয়াম রিলিজ করে, সেই ক্যালশিয়াম ছুটে যায় ঠিক পাশের জীবিত কোষে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই কোষগুলিও তখন একইভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে একের পর এক, তাই বাড়তি ক্যালশিয়াম ক্রমশ জমতে থাকে এবং ছোটো ছোটো লাইসোজোম থেকে নিঃসৃত হয় আনথ্রানিলিক অ্যাসিড। লাইসোজোমের পিএইচ পাশের কোষের সাইটোপ্লাজমের চেয়ে বেশি আর এই দু’য়ের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয় নীলচে বিভা। তবে খালি চোখে দেখলে এই আলোটা বোঝা যাবে না।
এবার প্রশ্ন, মানুষের ক্ষেত্রেও কি ব্যাপারটা তাই? গবেষণা চলছে, তবে শেষ সিদ্ধান্তে এখনও সহমত হতে পারেননি সব বিজ্ঞানী। জেমসের বক্তব্য, যদি কোনও মরণোন্মুখ মানুষকে মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে পর্যবেক্ষণ করা যায়, তা হলে হয়তো এরকম ছবিই দেখতে পাওয়া যাবে। তাঁর যুক্তি, স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তা ফলেই সারা শরীরের কোষের মৃত্যু হয় অক্সিজেনের অভাবে। তাই সেক্ষেত্রেও এমনটাই হওয়া উচিত।