বাঙালির সঙ্গে চায়ের সম্পর্কটা একটু স্পেশাল। একে তো দার্জিলিং আমাদের সম্পদ, তার উপর কোনও আড্ডা চা ছাড়া জমেই ওঠে না! ভালো লিকারের সোনালি চা সব বাঙালির দিনটাই স্পেশাল করে তোলে। যাঁরা চা খান নিয়মিত, তাঁরা নিশ্চয়ই ফার্স্ট ফ্লাশ আর সেকেন্ড ফ্লাশের ফারাক করতে পারেন। কিন্তু যাঁরা পারেন না, তাঁরা আজকের পর থেকে পারবেন!
চায়ের গাছ শীতকালে ঝিমিয়ে থাকে। তাপমাত্রা যত বাড়ে, তত চাঙ্গা হয়ে ওঠে গাছের পাতা। প্রথম ফসল তোলা হয় মার্চ নাগাদ, তা তৈরি হয়ে বাজারে আসে এপ্রিলে। সেটাই ফার্স্ট ফ্লাশ। সেকেন্ড ফ্লাশ ওঠে জুন মাসে, বাজারের জন্য রেডি হয় জুলাইতে। দার্জিলিং-নেপালের চা বাগানে সাধারণত অক্টোবর নাগাদ আরও একবার পাতা তোলা হয়, সেটার নাম অটাম ফ্লাশ।
এই বিভিন্ন সময়ের চা দেখতে এবং খেতে আলাদা। ফার্স্ট ফ্লাশের লিকার খুব পাতলা হয়, রং আর গন্ধও হালকা। ভালো ফার্স্ট ফ্লাশের পাতার রং একটু সবজেটে হতে পারে — যাঁরা গ্রিন টি চেনেন না, তাঁদের কাছে এই দুটো গুলিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। লিকারের রং হয় ফিকে কমলা। ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ে ফ্লোরাল আর ফ্রুটি ফ্লেভার মেশানো একটা গন্ধ থাকে। যাঁরা আর্ল গ্রে চা পছন্দ করেন, তাঁদের ফার্স্ট ফ্লাশ খেতে ভালো লাগবে।
ভালো ফার্স্ট ফ্লাশ ঠিক কোন তাপমাত্রায় কতক্ষণ ভেজালে তৈরি হবে তার নিয়মটা বিক্রেতার কাছ থেকেই জেনে নিন। সাধারণত বলা হয় ১৭৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে তিন মিনিট পাতা ভিজিয়ে রাখলে সেরা লিকার তৈরি হয়। তবে ব্র্যান্ড ভেদে এই নিয়মের বিচ্যূতি হতে পারে। ফার্স্ট ফ্লাশ খুব পুরোনো হওয়ার আগেই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রপার্টি বেশি, তাই প্রতি চুমুকে একটা ফ্রেশনেস থাকে।
গ্রীষ্মের শেষে যে পাতা ওঠে, তা থেকে তৈরি হয় সেকেন্ড ফ্লাশ। আর পাঁচটা কালো চায়ের পাতার সঙ্গে সাদা চোখে সেকেন্ড ফ্লাশের কোনও ফারাক করতে পারবেন না। পাতার রং কালো বা গাঢ় বাদামি। গন্ধও কড়া। ঠিকভাবে তৈরি করলে চমৎকার রং বেরোয় লিকার থেকে। সেকেন্ড ফ্লাশের গন্ধ বড়ো সুন্দর, ফ্লেভার ফ্লোরাল আর ফ্রুটি মেশানো। সেকেন্ড ফ্লাশের মাস্কেটেল নোট অনেকে খুব পছন্দ করেন। ১৯৫ থেকে ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপের জলে তিন মিনিট পাতা ভিজিয়ে রাখলে ভালো সেকেন্ড ফ্লাশ তৈরি হয়।
অটাম ফ্লাশ আর সেকেন্ড ফ্লাশের মধ্যে খুব বিরাট ফারাক নেই। তবে এর রং একটু বেশি লালচে হয়, ফ্লেভার একটু বেশি মোলায়েম। চা তৈরির পদ্ধতিও সেকেন্ড ফ্লাশের মতোই।