এদিক ওদিকে খুচরো বেড়াতে যাওয়া নয়, সোজা বিদেশ! যাকে বলে সাত সাগর আর তেরো নদীর পারে! তাও আবার নাকি সম্পূর্ণ নিখরচায়! এ পর্যন্ত পড়ে নির্ঘাত ভাবছেন উল্টোপাল্টা বকছি! আজ্ঞে না, গাঁটের কড়ি একেবারেই কম খরচ করে, আবার কখনও কখনও এক পয়সাও খরচ না করেও বিদেশে যেতে পারেন আপনি! নিশ্চয়ই ভাবছেন, কীভাবে? সেই সন্ধানই এবার দেবো।
প্ল্যানিং করুন আগেভাগে। বিদেশ যাওয়া তো আর বিকেলবেলা ফুচকা খেতে যাওয়ার মতো নয় যে মাথায় এল আর বেরিয়ে পড়লেন! বরং হাতে সময় নিয়ে প্ল্যান করলে আপনার বেড়ানোটাও ভালো হবে, খরচও পড়বে অনেক কম। প্লেনের টিকিট যত আগেভাগে কাটবেন, খরচ তত কম হবে। খুব ভালো করে রিসার্চ করুন নেটে, চেষ্টা করুন কোন কোন দর্শনীয় স্থান কম খরচে দেখা যায়, বা কোথায় কখন ছাড় চলে তার একটা খবরাখবর নেওয়ার। দামি হোটেল বা দামি রেস্তরাঁ এড়িয়ে চলুন, স্থানীয় ফুড কিয়স্ক থেকে খাবার কিনলে দাম কম পড়বে। আর হ্যাঁ, হোটেল খরচ যদি পুরোটা বাঁচাতে চান, তা হলে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যাওয়ার জন্য রাতের বাস বা ট্রেনের টিকিট কাটুন। এক ঘুমে রাত কাবার হয়ে যাবে, হোটেলে থাকার দরকারই পড়বে না! একান্তই কোথাও রাত কাটাতে হলে খোঁজ করুন হোম স্টে-র।
সাহায্য নিন অ্যাপের। ইন্টারনেটে একটু খুঁজলেই কাউচসার্ফিংয়ের মতো নানান অ্যাপের সন্ধান পাবেন। এই ধরনের অ্যাপগুলোয় রেজিস্টার করে রাখলে নানা দেশে স্থানীয় হোস্টের বাড়িতে কম খরচে বা কখনও কখনও শর্তসাপেক্ষে বিনা খরচে থাকার সুযোগ পাওয়া যায়। মূলত হোস্ট এবং সার্ফার হিসেবে রেজিস্টার করা যায় এ ধরনের অ্যাপে, এবং আপনার প্রয়োজন অনুসারে হোস্টের তালিকা বেছে দেয় অ্যাপ। ট্রাভেল লেডিজ নামে আর একটি অ্যাপ রয়েছে শুধু মহিলাদের জন্য। তবে আপনি পুরুষ বা মহিলা যেই হোন, অ্যাপের মাধ্যমে হোস্ট বাছাই করার সময় সচেতন থাকুন, ভালো রিভিউ রয়েছে এবং ভেরিফায়েড, এমন হোস্টই বেছে নিন। তাতে আপনার নিরাপত্তা বজায় থাকবে।
ইনস্টাগ্রাম এবং আরও নানা জায়গায় স্পনসরশিপের অনেক অফার থাকে। ব্যাপারটা হল, কোনও একটি ট্রাভেল এজেন্সির হয়ে আপনাকে বিজ্ঞাপনমূলক প্রচার করতে হবে সোশাল মিডিয়ার পেজে, এজেন্সির পছন্দ হলে আপনাকে বিনামূল্যে বা ডিসকাউন্টেড দামে কোনও একটি দেশভ্রমণের সুযোগ তারা করে দেবে। এ ধরনের ট্রাভেল এজেন্সির সন্ধান পেতে আপনার ভরসা সেই ইন্টারনেট! ভালো করে যাচাইবাছাই করে এজেন্সি চিহ্নিত করুন।
লেখালিখি, ছবি তোলা বা ভিডিও ব্লগ করার শখ রয়েছে আপনার? তা হলে এই শখই হয়ে উঠতে পারে আপনার নিখরচায় বিদেশ ভ্রমণের চাবিকাঠি। নিজের তোলা ছবি, বেড়ানোর ভিডিও ব্লগ বা ভিডিও ব্লগ আকারে আপলোড করুন বিভিন্ন সাইটে। একটু নেট ঘাঁটলেই এমন অনেক সাইটের সন্ধান পাবেন যেখানে ইউজার ব্লগ পোস্টের সুযোগ রয়েছে। আবার অন্য সাইটে পোস্ট না করে নিজের ওয়েবসাইটও তৈরি করে নিতে পারেন। এমন অনেক ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা আপনার ব্লগ, ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করার বিনিময়ে আপনার বিদেশ ভ্রমণের খরচ বহন করবে।
বিদেশি সেমিনার বা ওয়ার্কশপের মতো কর্মসূচিতে যোগদানের সুযোগ যদি আপনার থেকে থাকে, আপনি ভাগ্যবান। যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন, তাঁদের সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান বিদেশে কনফারেন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপে নিয়ে যায়, এবং যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার সমস্ত খরচই বহন করে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আজকাল অনেকেই বিদেশে পড়তে যান। মেধাবী হলে আর উজ্জ্বল রেজাল্ট থাকলে প্রায়ই নানা স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগও থাকে। স্কলারশিপের টাকার সামান্য অংশ খরচ করেই আপনি বিদেশের নানা জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। আবার যাঁরা আইটি সংস্থায় কাজ করেন এবং অনসাইট যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তাঁরাও নিখরচায় ঘুরে দেখতে পারেন নানা দেশ। তবে অত্যন্ত মেধাবী আর পরিশ্রমী না হলে এ ধরনের সুযোগ পাওয়া কঠিন, তাই সবসময় নিজের দক্ষতায় শান দিন আর চোখকান খোলা রাখুন। কে জানে, কখন নিখরচায় বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ এসে পড়ে!