ভুলে যাওয়ার সমস্যাটা কিন্তু কখন কার হবে তা আগে থেকে বোঝা যায় না, তা হওয়ার ধরা-বাঁধা কোনও বয়সও হয় না। তবে অনেকদিন ধরে শরীর কিছু কিছু সিগনাল দিতে থাকে। সেগুলি বুঝে নিয়ে চিকিৎসা আরম্ভ করলে বেশ কিছুদিন ভালো থাকা যায়। বয়স্কদের এ সমস্যা বেশি হয়।
কেন স্মৃতিভ্রংশ হয়?
আমাদের নার্ভের কোষগুলি ব্রেনের সঙ্গে একটা পয়েন্টে গিয়ে কানেক্ট করে, তার মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয় কার্যকলাপ। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বয়স হলে এই কানেকশনটা নড়বড়ে হয়ে যায়। তখনই স্মৃতি হারায়, রোজের কাজকর্ম করতে অসুবিধে হয়, একটা সময়ে গিয়ে নিজের যত্নআত্তি করতে ইচ্ছে করে না, কারও কারও ডিপ্রেশন হয়ে যায়, কারও বা রাগ বাড়ে। অ্যালজাইমার্স পেশেন্টদের মস্তিষ্কে জট পাকিয়ে যায়। তখনও স্মৃতি নিয়ে সমস্যা হয় – মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা একেবারেই মুছে যায় মন থেকে।
অ্যালজাইমার্স জেনেটিকভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পান অনেকে। চাইলেও তার হাত এড়ানো সম্ভব হয় না। যখনই দেখবেন পরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি কোনও কমপ্লেক্স কাজ করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেলছেন, ওষুধ খেতে ভুলে যাচ্ছেন, তখনই সতর্ক হোন, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা আরম্ভ করুন।
সেই সঙ্গে এই মানুষগুলিকে নিরাপদে রাখার জন্য কয়েকটি নিয়ম পালন করুন। মনে রাখবেন, রাগ বা চেঁচামেচি করে কোনও লাভ নেই, এঁরা যা করছেন সেটা ইচ্ছাকৃত নয় একেবারেই। বিরক্ত হলেও মেনে নিতেই হবে যতদিন এঁরা জীবিত আছেন। তাই এঁদের বেঁচে থাকাটা সহজ করে তোলার চেষ্টা করুন।
১. সর্বক্ষণ এঁদের উপর নজর রাখতে হবে
নিজে না পারলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিন, দরকারে ২৪ ঘণ্টার অ্যাটেন্ডেন্ট রাখতে হবে। খুব ভালো হয় যদি রোগীর নাম আর আপনার ফোন নম্বর লেখা একটা ব্রেসলেট বা লকেট বানিয়ে এঁদের পরিয়ে রাখা যায়। তাতে হারিয়ে গেলেও খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।
২. রান্নাঘর আর বাথরুমে যেন এঁরা একা না যান
সুস্থ, সচল মানুষ কাউকে সঙ্গে করে বাথরুমে যেতে চাইবেন না। কিন্তু যখন তখন ভুলে যাওয়ার সমস্যা আক্রমণ করতে পারে। বাথরুমে সেফটি রেজার থাকে, গিজার থাকে, তাই বিপদ হতে বেশিক্ষণ লাগবে না। এঁদের ছুরি, কাঁচি, জল, আগুন, খোলা ছাত বা বারান্দা থেকে দূরে রাখতে হবে সব সময়ে। কোনও বাচ্চার সঙ্গে এই বুড়ো মানুষটির ফারাক নেই, তা মনে রাখবেন।
৩. বাড়ির বাইরে গেলেই সঙ্গে কাউকে যেতে হবে
পাড়ার পার্ক, মিষ্টির দোকান, সামনে কোনও বন্ধুর বাড়ি – কোথাও একা যেতে দেবেন না। সব জায়গায় এঁরা সমান অসহায়। মনে রাখবেন, স্বাভাবিক অবস্থায় এঁরা কিন্তু প্রচণ্ড আপত্তি করবেন, কিছুতেই এত নিয়ম মানতে চাইবেন না। কিন্তু কিছু করার নেই।
৪. ডায়েটের দিকে লক্ষ রাখুন
অনেক ডিমেনশিয়া রোগী ভরপেট খেয়ে ওঠার পরেও বলেন তাঁকে খেতে দেওয়া হয়নি। বার বার বেশি খেলেই কিন্তু শরীর খারাপ হবে, ওজন বেড়ে যাবে, তার সঙ্গে হাজির হবে নানা ক্রনিক সমস্যা। তাই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে তাঁর রোজের খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৫. এঁরা কিন্তু সাধারণ কাজ করতেও ভুলে যান – বিরক্ত হবেন না
মনে রাখবেন, সাবান মেখে স্নান করা, প্রাতঃকৃত্য করে শৌচকর্ম সারার মতো কাজ করতে গিয়েও সমস্যা হয় ডিমেনশিয়া রোগীদের। তাঁদের কো-অর্ডিনেশনটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই রাগ না করে কীভাবে মানুষটিকে সুস্থ রাখা যায়, সেটা ভাবুন।