একটা কথা শুনতে খারাপ হলেও খুব সত্যি – সন্তানের উপর আমরা নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, চাওয়া-পাওয়া সব যেভাবে চাপিয়ে দিই, সেভাবে বাবা-মায়ের উপর কোনও কোড অফ কনডাক্ট তারা চাপিয়ে দিতে পারে না। তাই বড়োদের খারাপ ব্যবহার তারা মুখ বুজেই মেনে নেয়। কিন্তু তাদের মনের উপরে চাপ পড়ে এবং নিজেদের অজান্তেই তারা মা-বাবার মতো হয়ে উঠতে থাকে।
বিদেশে শিশু-কিশোরদের মনোজগৎ নিয়ে বহু গবেষণা হয়। বাবা-মা সন্তানপালনের সময়ে হিংসার আশ্রয় নিচ্ছেন এমন প্রমাণিত হলে বাচ্চার দায়িত্ব তাঁদের হাত থেকে কেড়েও নেওয়া হতে পারে। কারণ মনে করা হয় যে বিবাহিত জীবনের অশান্তি, ঝগড়ার আঁচ সন্তানের সার্বিক বিকাশের উপর পড়তে বাধ্য।
. অভিভাবকেরা যদি পরস্পরের সঙ্গে বা পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে লাগাতার খারাপ ব্যবহার করতে আরম্ভ করেন, তা হলে বাচ্চারাও সেটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নেয় এবং তাদের আচারে তা আরও বেশি করে প্রকাশ পায়।
.যাঁরা সন্তানের সামনেই সিগারেট খান, রোজ মদ্যপান বা সারাক্ষণ গালিগালাজ করেন তাঁরা নিজেদের অজান্তেই শিশুটির কাছে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছেন। সেও পরে আপনার দেখানো রাস্তায় হাঁটলে আশ্চর্য হবেন না।
. রেজাল্ট খারাপ হলেও বকাঝকা না করে তার পাশে দাঁড়ান, জানতে চান কোথায় অসুবিধে হচ্ছে। তার সমস্যা না বুঝেই চিৎকার করলে বাচ্চা কী করবে জানেন? পরের বার আপনাকে আর পরীক্ষার খাতা দেখাবে না, আপনার সই নকল করবে, অন্যের থেকে টোকার চেষ্টা করবে। স্কুলের পরীক্ষার নম্বর নিয়ে মাথা গরম করবেন না, সেটুকু দিয়েই আপনার সন্তানের বিচার হয় না।
. সন্তানকে ঠিক-ভুলটা চেনান, এমন একটা ব্যবহার করুন যাতে সে আপনাকে শ্রদ্ধা করে। কিন্তু শাসন করা, ভয় পাইয়ে রাখার টেকনিকটা অ্যাপ্লাই না করলেও চলবে। সব মানুষ ভুল করে, আপনিও করেছেন। কঠিন শাস্তি পেলেই যে মানুষ অন্যায় করা বন্ধ করে দেয়, তেমনটা কিন্তু এখনও প্রমাণিত হয়নি।
. বাচ্চার সব আবদার মেনে নেবেন না। কিন্তু কেন মানছেন না, সে সম্পর্কে তার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। তা না হলে সে অভিভাবকের সমস্যার দিকটা বুঝবে না।
. যতটা সম্ভব সত্যি কথা বলুন। হ্যাঁ, অনেক সময়ে সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য মিথ্যে বলতে হয় – কিন্তু বাচ্চার সামনে আপনি সত্যি বললে সে-ও তেমনটাই করতে শিখবে।