বিগত কিছুদিনের মধ্যে এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটল, যা ফিটনেস সম্পর্কে আমাদের ধারণাকেই আ-মূল নাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েকদিন আগেই আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ছোটোপর্দায় খুব জনপ্রিয় তারকা সিদ্ধার্থ শুক্লা – তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪০।
তার কিছুদিন আগে এভাবেই এক ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছেন চিত্রতারকা ও ফিটনেস গুরু মন্দিরা বেদীর স্বামী রাজ কৌশল, তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৭। বিশ্বকাপের ম্যাচ চলাকালীন মাঠেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল ডেনমার্কের ফুটবলার ২৯ বছরের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের। সৌরভ গাঙ্গুলির আর্টারিতে ব্লকেজ থাকার ঘটনাটাও আমরা এখনও পুরোপুরি হজম করে উঠতে পারিনি।
সেলেব্রিটিদের খবর সাধারণ মানুষকে একটু বেশি নাড়া দেয়, এ কথা ঠিক। তার উপর যাঁরা এভাবে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বাইরে থেকে দেখে খুব ফিট মনে হত। রীতিমতো জিমে যেতেন, শারীরিক কসরত করতেন, মেনে চলতেন নির্দিষ্ট ডায়েট। তার পরেও এমন মারাত্মক হার্ট অ্যাটাক হলে তো সত্যিই চিন্তার বিষয় – কারণ আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা না করি এত ব্যায়াম, না খাওয়াদাওয়ার বিধিনিষেধ থাকে। আমাদের তা হলে কী হবে?
এ কথা কিন্তু সত্যি যে ডাক্তারদের কাছেও আজকাল অনেক অল্পবয়সেই ক্লগড আর্টারির সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছেন বহু মানুষ। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে কিছু নিয়ম মেনে চলাটা একান্ত জরুরি।
১. আপনার পরিবারে কি হার্টের অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি?
তা হলে আপনাকে অল্প বয়স থেকেই ডাক্তার দেখাতে হবে, রেগুলার চেকআপের কোনও বিকল্প নেই। ৩০-এর পর থেকে নিয়মিত ডাক্তার দেখালে এই ধরনের সমস্যা বেড়ে ওঠার আগেই সামলে নেওয়া যাবে। ফিটনেস আর সু-স্বাস্থ্য এক নয়, এটা মনে রাখবেন। স্রেফ জিমে গেলে আর ওয়েট ট্রেনিং করলেই স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠা যায় না।
২. খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দিন
আপনার রোজের ডায়েট হার্টের জন্য কতটা ভালো, তা দেখতে হবে। ফল-সবজি খাওয়ার কোনও বিকল্প নেই, ভালো মানের ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেটও স্বাস্থ্যের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। যাঁরা মাঝে-মধ্যেই ক্র্যাশ ডায়েট করেন ওজন কমানোর জন্য, অথবা প্রচুর সাপ্লিমেন্ট নেন, তাঁরা আরও সাবধান। আপনার ট্রেনার কিন্তু ডাক্তার নন।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা ফ্যাট যেমন ওজন বাড়ায়, তেমনভাবেই নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে অতিরিক্ত প্রোটিনও। তাই খুব হিসেব করে খান, সোডিয়ামের মাত্রাও কম রাখতে হবে – দূরে থাকুন যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার ও সস থেকে।
৩. জল খাওয়ার ব্যাপারে কার্পণ্য করবেন না
ডিহাইড্রেশন কিন্তু শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। তার কারণে মাসলের স্প্যাজমও হতে পারে। তাই যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁরা জল খাওয়ার উপর জোর দিন অবশ্যই।
৪. শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম দেওয়া দরকার
লম্বা সফর সেরে এসেছেন, বা কাজের চাপে কয়েকদিন ঠিকমতো ঘুম হয়নি? এই অবস্থায় ভুলেও জিমে যাবেন না, ব্যায়াম করবেন না। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব ধীরে ধীরে আপনাকে দুর্বল করে দেবে। তার উপর যদি প্রবল ব্যায়াম করেন, তা হলে আরও সমস্যা বাড়বে।
৫. ধূমপান আপনাকে আরও দুর্বল করে দেবে
আপনি হয়তো কিছুতেই ধূমপান ছাড়তে পারছেন না, কিন্তু তা আপনার ফুসফুস আর হৃদযন্ত্র, দুয়েরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মদ্যপানও একইরকম বিপজ্জনক হতে পারে।
৬. ট্রেনার ছাড়া কখনও ব্যায়াম করবেন না
ছোটো ছোটো ভুল বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হয়তো ট্রেডমিলে চলার সময়ে আপনার মেরুদণ্ড একটু বেঁকে আছে, বা ওজন তোলার সময়ে পায়ের ব্যালেন্স ঠিক থাকছে না – এগুলো কেবলমাত্র প্রশিক্ষিত ট্রেনারের চখেই ধরা পড়বে। তাই বাড়িতে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যায়াম করা ঝুঁকি নেবেন না।
৭. কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন? তা হলে বাড়তি সাবধানতা নিন
কোভিডকে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না, বাইরে প্রকাশ না পেলেও এ কথা ঠিক যে তা আপনাকে ভিতর থেকে খুব দুর্বল করে দিয়েছে। ব্যায়াম করার এনার্জি না থাকলে নিজেকে জোর করবেন না। বিশ্রাম নিন, শরীরকে সেরে ওঠার সময় দিন।
৮. শারীরিক দুর্বলতার কোনও লক্ষণকে হেলাফেলা করবেন না
মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিমে ভাব, এনার্জির অভাব, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধে হওয়া, চোয়ালে বা হাতে অসুবিধে হতে থাকাটা কিন্তু কোনও গভীর সমস্যার পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।