মানুষ তার চারপাশে নিজেই অজস্র বেড়া কেটেছে, তা না হলে সমাজের কাঠামোটাকেই রাখা যেত না। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী, বিয়ের পর নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতিই কেবল আগ্রহ থাকা উচিত। কিন্তু কার্যত তো তা হয় না – অনেক সময়েই মাঝে অন্য মানুষ এসে পড়েন – তেমনটা হলে কী হবে?
. দেখুন, এটি এতই কঠিন প্রশ্ন, যার উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে থাকতে থাকতে ক্লান্তি আসে অনেক সময়ে। তখন রোজের জীবনের বাইরে গিয়ে স্রেফ একটু এক্সাইটমেন্টের জন্যই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। কখনও বিয়ের পর মনের মানুষের সন্ধান মেলে – সত্যি প্রেম হয়, কেউ প্রেমহীন সম্পর্ক থেকে বেরোতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলেন নতুন কাউকে।
. একবার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলে মাথায় অত বাধা, বিপদ নিয়ে চিন্তা থাকে না। খুব দ্রুত গতিতে তা এগোতে থাকে। তবে বিয়ের বাইরে কারও প্রেমে পড়লেই কিন্তু সবাই সব ভুলে বেরিয়ে গিয়ে নতুন সংসার পাতেন না। সম্পর্কের রসায়ন মানুষ ভেদে ভিন্ন হয়।
. অনেক সময়েই দেখা যায় এই জড়িয়ে পড়ার মূল কারণ ছিল শারীরিক আকর্ষণ। শারীরিক আকর্ষণের সমস্যা হচ্ছে, তা কিছুদিন পরেই কেটে যায়। যদি দেখেন, যে মানুষটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, তার প্রতি মনের টান তেমন নেই, শরীরের খিদে মেটার পরেই গ্লানি আসছে, তা হলে ধরে নিতে হবে এ সম্পর্কের আয়ু বেশিদিন না। খুব সাবধানে থাকা উচিত দু’জনেরই। অসুরক্ষিত যৌনতা থেকে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড অসুখ করতে পারে, ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে পরবর্তীকালে ব্ল্যাকমেলিংয়ের চেষ্টা করা হতে পারে – তাই না জেনে বুঝে এগোবেন না।
. ভেবে দেখুন আপনি পার্টনারের থেকে কী চাইছেন? সান্নিধ্য? খানিকটা সময় তার সঙ্গে কাটিয়ে নিজের সংসারে ফিরে আসা? নাকি বিয়ের স্বীকৃতি? গোড়া থেকে আপনার পার্টনারের সেটা জানা উচিত। না হলে কিন্তু পরে সমস্যা হয়। এমন উদাহরণ আছে যেখানে নারীটি জেনেশুনেই বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়েছেন, তাঁর সন্তানের মা হয়েছেন, একার দায়িত্বে সন্তানকে বড়ো করেছেন – পুরুষটিকে বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসতে বলেননি, এমনকী তাঁদের প্রেমটাও চিরজীবন টেকেনি। আবার বিবাহিতা নারীর প্রেমে পড়ে পুরুষ তাঁর বন্ধু হিসেবে সারাজীবন পাশে থেকেছেন, তাঁর পরিবারের অঙ্গ হয়ে উঠেছেন এমন উদাহরণও বিরল নয়।
. অনেকেই জানতে চাইবেন, বিয়ের বাইরে প্রেমের সম্পর্ক থাকা কি বৈধ? দেখুন, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী যদি একে অপরের সান্নিধ্যে ভালো থাকেন এবং নিজেদের রসায়নে আদালতের সিলমোহর দেওয়ার জন্য ব্যস্ত না হয়ে ওঠেন, তা হলে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে দুনিয়াসুদ্ধু সবার মাথাব্যথা করার দরকার নেই। এ সব নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হয় না, চেপেচুপে রাখাটাই দস্তুর। কিন্তু এসব আকচার ঘটে। আর একে অপরের প্রতি ভালোবাসা খাঁটি হলে এবং দায়িত্ববোধ থাকলে সব পরকীয়া প্রকাশ্যে আসেও না, সম্পর্কে তিক্ততাও তৈরি হয় না।
. অন্য কারও প্রেমে পড়লেই কিন্তু বিবাহিত স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সব সুতো ছিঁড়ে যায় না। ভালোবাসার নানা স্তর থাকে, নানা স্তরে নানা মানুষ থাকেন। পরিণত বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে, কেউ চাইলে সব দিক সামাল দিতে পারেন। আবার যাঁরা সব ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন, তাঁদেরও কাউকে দোষ দেওয়া উচিত নয় – প্রত্যেক মানুষের লড়াইটা তাঁর নিজের।
. পরকীয়া ঠেকানোর কোনও উপায় নেই। তবে রোজ নিজের বিয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারেন। কখনও আপনার পার্টনারকে এলেবেলে ভাববেন না – রোজ তাঁর সঙ্গে ভালো সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। ছোটো ছোটো সারপ্রাইজ দিন, সহমর্মিতা দেখান, তা হলে অন্য কারও প্রতি আসক্ত হওয়ার চান্স কম।
. যদি জানতে পারেন আপনার পার্টনার পরকীয়ায় লিপ্ত, কী করবেন? কথা বলুন, সত্যিটা জানতে চান। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কী চান? রোজের অপমান বা অত্যাচার মেনে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে তেমন কিছু না হলে বা ভুল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলে পার্টনারকে ফের মেনে নেবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।