আপনি জানেন আপনার মেডিক্লেম আছে, নিয়ম করে প্রিমিয়াম জমা করেন। কিন্তু মায়ের হাঁটুর অপারেশন করাতে যখন ডাক্তারের বলে দেওয়া হাসপাতালে গেলেন, তখন জানা গেল, সেই হাসপাতাল বিমার ক্যাশলেস তালিকায় নেই বলে আপনাকে গাঁটের কড়ি খরচ করে চিকিৎসা করাতে হবে। অথবা হাসপাতাল থেকে ছুটির সময় বলা হল ‘নন-মেডিক্যাল’ খরচ, যেমন ঘরের ভাড়া, আয়ার খরচ, গজ-তুলো ইত্যাদির দাম বাবদ আপনাকে বেশ কিছু টাকা ক্যাশ দিতে হবে।
এই ধরনের সমস্যায় অনেকেই পড়েন এবং কারণ একটাই – বিমা করানোর সময় তাঁরা নিয়মকানুন খতিয়ে পড়ে দেখেন না। অনেক সময়ে এজেন্ট পলিসি বিক্রি করার জন্য এসব ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য না-ও দিতে পারেন। তাই কারও উপরে নির্ভর করবেন না, নিজে সবটা খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
মেডিক্যাল ইনশিওরেন্স করানোর সময় কয়েকটা ভুল করবেন না —
১. পরিবারের কারও বয়স, রোগের ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেবেন না।
২. কোনও জরুরি তথ্য চেপে যাবেন না।
৩. বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা থেকেই বিমা কিনুন।
. আজকাল স্রেফ অ্যালোপ্যাথি নয়, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথিকের মতো অল্টারনেটিভ মেডিসিনের চিকিৎসাকে মান্যতা দেয় কিছু কিছু বিমা কোম্পানি, রোবোটিক সার্জারি বা স্টেম সেল ট্রিটমেন্টের মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিকেও আনা হয়েছে মেডিক্লেমের আওতায়। বিমা কেনার সময়েই খোঁজখবর নিন – আপনি যে সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা ভাবছেন, তারা এ সব সুবিধে দেয় তো? বিমার আওতায় কী কী আছে, আর কী নেই সেটা জানা হচ্ছে আপনার প্রাথমিক কর্তব্য।
. যত কম বয়সে স্বাস্থ্যবিমা করানো যায় তত ভালো। এমন বিমা করান যা আপনার পকেটের উপর চাপ ফেলবে না, কিন্তু বাড়ির সকলের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। কম বয়সে স্বাস্থ্যবিমা করানোর আরও একটা সুবিধে আছে – অধিকাংশ ইনশিওরেন্স কোম্পানিতেই একটা ওয়েটিং পিরিয়ড থাকে, পলিসি শুরু হওয়ার পর বছরখানেক কোনও সুবিধে পাওয়া যায় না। কম বয়সে বিমা করালে খুব বেশি ক্লেম সাধারণত হয় না, তাই ওয়েটিং পিরিয়ড চোখের পলকে পার হয়ে যাবে।
. ছানি বা টনসিল অপারেশন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পেশেন্টকে ছেড়ে দেওয়া হয় – একে বলে ডে কেয়ার প্রসিডিওর। ইনশিওরেন্স কোম্পানিগুলি এই ধরনের অপারেশনেও ক্যাশলেস সুবিধে দিচ্ছে আজকাল। বিমা করানোর বছর দুয়েক পর থেকে পাওয়া যায় হার্নিয়া, পাইলস, ফিশ্চুলার মতো ‘স্পেসিফিক ডিজিজ’-এর চিকিৎসার খরচ। কিছু মেডিক্লেম প্রেগন্যান্সি সংক্রান্ত খরচের খানিকটা বহন করে। বিমার কাগজপত্র খুব খুঁটিয়ে পড়তে হবে, কোন কোন সুবিধে মিলবে, তার জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে ইত্যাদি গোড়াতেই জেনে নেওয়া ভালো।
. কিছু ইনশিওরেন্স খুব কম টাকাতেই বিক্রি হয় – অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি কো-পেমেন্ট পলিসি হয়। অর্থাৎ বিমা কোম্পানি কখনওই আপনার চিকিৎসার পুরো দায়ভার বহন করবে না, বেশ খানিকটা আপনাকেও বহন করতে হবে। তাই কখনও সস্তা হেলথ ইনশিওরেন্স দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, খুব ভালো করে রিসার্চ করে তারপর এগোনো উচিত।
. বিমা করানোর কিছুদিন পর আপনার মাইনে বাড়ল, আপনিও প্রিমিয়ামের পরিমাণ খানিকটা বাড়িয়ে নানা অ্যাড-অন সুবিধে নিতে চাইলেন – কিন্তু আপনার পলিসিতে আদৌ সেটা করা যাবে তো? দেখে গোড়াতেই। অ্যাড-অন আর লাইফটাইম রিনিউইয়াল সুবিধে ছাড়া পলিসি কেনাটা বোকামি। সেই সঙ্গে দেখে নিন প্রি আর পোস্ট হসপিটালাইজেশন সুবিধে আছে কিনা।
. এমন বিমা কোম্পানি বাছুন যাদের নেটওয়ার্ক হাসপাতালের সংখ্যা বেশি।