ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা মহিলাদের জন্য সর্বক্ষেত্রে ৫০% সংরক্ষণের পক্ষে জোর সওয়াল শুরু করেছেন। তাঁর বক্তব্য, মেয়েদের আর দেরি না করে এবার জীবনের সব ক্ষেত্রে নিজেদের জন্য পুরুষের সমান অধিকার দাবি করা উচিত। অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে চিৎকার করতে হলে সেটাই করতে হবে – এমন পরামর্শই দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত স্তরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব পেশ করার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বক্তব্য হচ্ছে, কারও দয়ার ভরসায় না থেকে মহিলাদের এবার নিজেদের সমানাধিকারের দাবিটা জোর গলায় জানানো উচিত। মেয়েদের হাজার-হাজার বছর ধরে শোষণ করাটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের তো আর হারানোর কিছু নেই, এবার লড়াই ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। কোনও শৃঙ্খলের বাঁধনে তারা আটকা পড়ে থাকবেই বা কেন?
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যক্ত হয়েছেন ৯জন বিচারপতি, তাঁদের মধ্যে তিনজন মহিলা। সুপ্রিম কোর্টের ৭১ বছরের ইতিহাসে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা মাত্র ১১ – সংখ্যাটা এই তিনজন, অর্থাৎ জাস্টিস হিমা কোহলি, জাস্টিস বি ভি নাগরত্না, জাস্টিস বেলা এম ত্রিবেদীকে ধরে! প্রথম মহিলা বিচারপতি এম ফতিমা বিভি নিযুক্ত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে! রেকর্ডের দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখন সুপ্রিম কোর্টে মোট ৩৩ জন বিচারপতি আছেন, তার মধ্যে মহিলার সংখ্যা মাত্র ৪!
সুপ্রিম কোর্টের মহিলা আইনজীবীদের সংগঠন নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সম্মানে এক সভার আয়োজন করেছিল সম্প্রতি, সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি নিজেই তুলে ধরেছেন কিছু তথ্য। এ দেশের আইনবিভাগে এখনও মহিলাদের সংখ্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো কম। বিশেষ করে নিম্ন আদালতে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা হাতে গোনা।
বলেছেন, “নিম্ন আদালতে জুডিশিয়াল অফিসারের সংখ্যা মোট কর্মীর ৩০ শতাংশেরও কম। সুপ্রিম কোর্ট আর হাই কোর্টে সংখ্যাটা কত জানেন? ১২% মাত্র! জানি না এই পেশায় মহিলারা পুরুষের সঙ্গে যেদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন, সেদিন আমি কোথায় থাকব। তবে যেখানেই থাকি না কেন, খুশি যে হবই, তা নিয়ে মনে সন্দেহ রাখবেন না!”
কেন মেয়েরা আইনি পেশায় আসতে চান না? বিচারপতি রামানার বক্তব্য, মূল কারণ হচ্ছে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব। ভারতের মতো একটি দেশে ৬০,০০০ কোর্ট আছে, এর ২২%-এ মহিলাদের জন্য শৌচালয় নেই। একেবারে শিশু সন্তানকে ফেলে বাবারা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারলেও মায়েরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না একেবারেই – কিন্তু কর্মরতা মায়েদের জন্য অফিসের আশেপাশে ক্রেশ তৈরি করার কথা ভাবেন না কেউই। ভিড় কোর্ট চত্বরে মহিলা আদালতকর্মী-উকিলদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা আর এক সমস্যা – এই সব কারণেই হয়তো আইনবিভাগ থেকে দূরে থাকেন মহিলারা!
কিন্তু, জীবনের সব ক্ষেত্রেই তো এই সব কারণগুলি মহিলাদের পিছিয়ে পড়তে বাধ্য করে, তাই না? স্কুল শিক্ষিকা থেকে আরম্ভ করে চাষের ক্ষেতে কাজ করা মহিলা বা গৃহকর্মসহায়িকা – সবাই সমানভাবে ভোগেন শৌচাগারের অভাবে। বাচ্চার দেখভালের চিন্তায় কেরিয়ার জলাঞ্জলি দিতে হয় আইটি সেক্টরে কর্মরতাকে। সব ক্ষেত্রে সমানাধিকারের জন্য আরও কত লড়াই করতে হবে কে জানে!