যা গরম পড়েছে, কিছুতেই ম্যানেজ করা যাচ্ছে না! ঝড়বৃষ্টি কবে আসবে তার ঠিক নেই, তার মধ্যে গলা ভেজানোর জন্য রান্নাঘরে ঢুকতে কারই বা ইচ্ছে করে? তবে আমরা খুব সহজ কয়েকটি রেসিপির সন্ধান দিতে পারি আপনাকে – খুব বেশি পরিশ্রম না করেই তা বানিয়ে ফেলতে পারবেন।
আমাদের সবার রান্নাঘরেই এমন কয়েকটি উপাদান থাকে, যা দিয়ে গরমকালে দারুণ উপাদেয় কিছু শরবত বানিয়ে ফেলা যায়। এখানে অবশ্য খুব জরুরি একটা কথা আছে – অনেকেই ভাবেন, শরবত মানেই চিনি, আর তার মানেই অস্বাস্থ্যকর! ব্যাপারটাকে ঠিক ওভাবে দেখাও ভুল। বাড়াবাড়িরকম চিনি নিশ্চিতভাবেই স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়, কিন্তু হিসেবের মধ্যে খেলে নুন-চিনির কোনওটাই খারাপ নয়। তবে একান্ত অনিচ্ছে থাকলে চিনির জায়গায় গুড় ব্যবহার করতে পারেন।
. মৌরি-মিছরি/ গুড়ের শরবত
রাতে শোবার আগে এক চা চামচ মৌরি আর দেড় চাচামচ পরিমাণ তাজা আখের গুড় বা মিছরি ভিজিয়ে রাখুন এক লিটার জলে। পরদিন এই জলটা ছেঁকে মেশান বিটনুন, ভাজা মশলার গুঁড়ো আর লেবুর রস। গুড় দিলে চমৎকার সুন্দর রং হবে শরবতে। বাতাসাও দেওয়া যায়। মৌরি শরীর ঠান্ডা রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়। রোদে বেরনোর আগে এক গ্লাস খেতে পারেন, ফিরে এসে পাখার নিচে বসে ঘাম শুকিয়ে নিয়েও খাওয়া যায়।
. কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আম পুড়িয়ে শরবত বানালে তাতে একটা স্মোকি ফ্লেভার আসে। পোড়ানোর উপায় না থাকলে তা সেদ্ধ করে নিয়েও বানাতে পারেন। আমের খোসা ছাড়িয়ে ছোটো ছোটো টুকরোয় কেটে নিন। তারপর হিসেবমতো জল দিয়ে সেদ্ধ বসান, সঙ্গে একটু নুন দিয়ে দেবেন। সেদ্ধ হয়ে গেলে গ্যাস অফ করে চিনি আর বিটনুন দিন। গরমে সুন্দরভাবে গলে যাবে – এমন পরিমাণে চিনি দিন যাতে শরবতে টক-মিষ্টি ভাবটা থাকে। ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা কাঁচালঙ্কা আর আট-দশটা পুদিনাপাতা সমেত আমটা বেটে নিন। এটা কাচের বোতলে ভরে ৩-৪দিন ফ্রিজে রাখা সম্ভব। খাওয়ার আগে আমের কাত্থ আর ভাজা মশলা দিন গ্লাসে। উপর থেকে ঠান্ডা জল মেশালেই শরবত রেডি হয়ে যাবে!
. পুদিনা আর লেবুর শরবত
পুদিনা আর পাতিলেবু দুটিই গরমকালের জন্য পারফেক্ট! লেবুর রস বের করে নিন, তার মধ্যে মেশান বিটনুন, থেঁতলে নেওয়া পুদিনা আর চিনি। ভালো করে মিশিয়ে ঠান্ডা জল ঢেলে নিলেই রেডি! পুদিনা অবশ্য এমনি জলের মধ্যেও মিশিয়ে খাওয়া যায়।
. তুকমলঙ্গা বা সবজার শরবত
কেউ বলেন তুকমলঙ্গা বা তোকমা, কেউ বলেন সবজা। মিষ্টি তুলসীর বীজকে যে নামেই ডাকুন না কেন, তার উপকারিতা অনেক। প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন, এসেনশিয়াল ফ্যাটের আধার এই বীজ একগ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখুন। আধ ঘণ্টা পর এমনিও খেতে পারেন, বা বিট নুন, লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন। তোকমায় প্রচুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তাই যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁদের জন্যও এটি খুব ভালো।
. লস্যি
বাড়িতে পাতা টক দই, বিট নুন, লেবুর রস, সামান্য জিরে ভাজা গুঁড়ো/ ভাজা মশলার গুঁড়ো – এই হচ্ছে উপাদান। চাইলে সামান্য চিনি আর পুদিনা পাতাও মেশানো যায়। লাঞ্চ বা ডিনারের আধ ঘণ্টা পরে খেতে পারেন। দিনের অন্য সময়েও খাওয়া যায়।
. ছাতুর শরবত
আপনার নিজস্ব প্রোটিন শেক হচ্ছে ছাতুর শরবত। ছোলার ছাতু, দই, বিট নুন আর লেবুর শরবত খেতে যতটা ভালো, ততটাই উপকারি। সামান্য সবজাও মিশিয়ে নিতে পারেন।
. ঠান্ডাই
চার-পাঁচটা আমন্ড, কয়েকটি কাজু, এক চাচামচ পোস্তদানা, এক চাচামচ চারমগজ, কয়েকটা গোলমরিচ, আধ-চামচ মৌরির দানা একসঙ্গে ভিজিয়ে রাখুন সামান্য উষ্ণ জলে। ঘণ্টা দুয়েক পর সবটা পিষে নিন, পেষার আগে আমন্ডের খোসাটা ছাড়িয়ে নিতে হবে। ইচ্ছে হলে এক-আধটা খেজুরও দিতে পারেন, তা হলে আর চিনি দিতে হবে না। এই মিশ্রণটা ঠান্ডা দুধে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিলেই আপনার শরবত রেডি! তবে এটা কিন্তু রোজ না খাওয়াই ভালো, কারণ বুঝতেই পারছেন – ক্যালোরির মাত্রা বেশি।