সোশাল মিডিয়া হচ্ছে সেই পাড়া, যেখানে সারাক্ষণ কেউ না কেউ জেগে আছে, আর অন্যের খুঁত ধরে বেড়াচ্ছে। যাঁদের ফলোয়ার বেশি, তাঁদের হচ্ছে সমুদ্রে শয়ন অবস্থা। রোজ নিয়ম করে কিছু না কিছু আপলোড করতেই হবে, না হলে চলবে না। পোস্ট ভাইরাল হলে তবেই শান্তি।
ওদিকে আবার একদলের থেকে প্রশংসা জুটলে অন্য কেউ এসে ঠিক যাচ্ছেতাই অপমান করে দিয়ে যাবেন। অহেতুক তর্ক হবে, কেউ কেউ তো গায়ের জ্বালা মেটানোর জন্য সেলেব্রিটিদের পোস্টে গিয়ে যাচ্ছেতাই লিখে দিয়ে আসেন।
সাম্প্রতিক কালেই এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে, যা দেখে মনে হচ্ছে, এবার আমাদের সবারই কয়েকটা বিষয় নিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করা দরকার। কে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেও মা হলেন, কে প্রেমিকের সঙ্গে বিদেশ বেড়াতে গিয়ে ছবি পোস্ট করছেন তা নিয়ে তুমুল হল্লা হচ্ছে।
বেচারা অলিম্পিক পদকজয়ী নীরজ চোপড়া কোন সাক্ষাৎকারে একবার বলে ফেলেছিলেন যে তাঁর জ্যাভেলিন নিয়ে পাকিস্তানি থ্রোয়ার প্র্যাকটিস করছিলেন বলে তিনি নিজের বর্শা খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইভেন্ট শুরুর আগে – তাঁর ফলোয়াররা সেটাকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাধানোর পর্যায়ে তুলে নিয়ে গেলেন। বাধ্য হয়ে নীরজকে ভিডিয়ো বানিয়ে শেয়ার করতে হল – তিনি বললেন যে এই বিষয়টিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর দরকার নেই, এক খেলোয়াড় অন্যের জিনিস নিয়ে হামেশাই প্র্যাকটিস করেন।
র্যাপার বাদশা টিকটকে একটি ভাইরাল রিল দেখে সহদেও দিরদো বলে একটি গ্রাম্য স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে খুঁজে বের করে নতুন গান বেঁধেছেন। সে গান রমরমিয়ে চলছে। লোক বাদশা তো বটেই, বাচ্চা গায়কটিকেও ছাড়ছে না। তুলো ধুনে দেওয়া হচ্ছে একেবারে। কারণ? বহু বোদ্ধার মনে হচ্ছে, তার এত প্রচার পাওয়ার যোগ্যতাই নেই। অবস্থা দেখে বলিউডের সঙ্গীত পরিচালকরা আসরে নেমেছেন, বলেছেন এভাবে ছোটো ছেলেটিকে হেনস্থা করার কী আছে? তার গান দর্শকের পছন্দ হয়েছে, সেটাই শেষ কথা হওয়া উচিত।
আমাদের কী মনে হয় জানেন?
. সোশাল মিডিয়াকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে আপনার খামোকা নিজেদের জীবনে অশান্তি বাড়াচ্ছি। নুসরত জাহান, শ্রাবন্তীদের নিয়ে এত না ভেবে নিজের বাড়ির দিকে তাকান একটু – পরিবারে শান্তি বিরাজ করবে। আপনি ওনাদের পোস্টে গিয়ে গায়ের জ্বলা মেটানোর জন্য দশটা কথা লিখে আসতেই পারেন – তাতে ওঁদের কিস্যু যাবে আসবে না। সেই সময়টা নিজের পরিবারকে দিন, সুখে থাকবেন।
. কারও মুখোমুখি হতে হচ্ছে না, আড়ালে থেকেও বিষ উগরে দেওয়া যাচ্ছে বলেই যাকে ইচ্ছে যা-তা লিখবেন না। আবারও বলছি, এতে একমাত্র আপনি ছাড়া কারও ক্ষতি হচ্ছে না। নেগেটিভিটি ছড়াবেন না, তাতে লাভ নেই। উলটে এই তেতো ভাবটা আপ নাকেই ঘিরে রাখবে।
. আপনার কাউকে পছন্দ নয়? তাঁকে ফলো করবেন না। ব্যস, মিটে গেল। গুচ্ছের খারাপ কথা বলার দরকার কি বলুন তো? পাড়ায় যে সব কাকিমা বা পিসিমারা এসব করতেন, তাঁরা ‘সব ব্যাপারে বড্ড নাক গলান’, ‘কুচুটে’ এ সব তো আপনিই বলেছেন এতকাল। সেই কাজটাই নিজে করছেন কেন?
. সমস্ত সোশাল মিডিয়া কিন্তু ট্রোলিং বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। ধীরে ধীরে নানা নিয়মকানুন তৈরি হচ্ছে। খুব আজে বাজে কমেন্ট আজকাল পোস্ট করা যায় না, যাঁর প্রোফাইলে গিয়ে লিখছেন, তিনি রিপোর্ট করলে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধও হয়ে যেতে পারে কিন্তু!
. কাউকে খুন-ধর্ষণের মতো হুমকি দেবেন না। তাতে আইনের চোখে আপনি অপরাধী প্রমাণিত হবেন।
. কে মোটা, কে বেঁটে তা নিয়ে মন্তব্য করতে যাবেন না। বডি শেমিং ছাড়াও অনেক জরুরি বিষয় আছে দুনিয়ায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন।