স্ট্রেস আমাদের জীবনে আগেও ছিল, কিন্তু অতিমারির মারণ থাবা সভ্যতাকে কাবু করার পর থেকে তার প্রভাব আরও বেড়েছে। বিশেষ করে যাঁদের স্বাস্থ্য খুব ভালো নয়, বাড়িতে বয়স্কদের দায়িত্ব নিতে হয় এবং পাশাপাশি আর্থিক সমস্যাও আছে, তাঁদের স্ট্রেসের মাত্রা বেশ বেশি। কিছু কিছু সময়ে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং এবং সামলাতে না পারলে শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
. ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা সম্প্রতি স্ট্রেস সামলানোর কিছু উপায় তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে বলেছে, শরীরকে স্ট্রেস তিনভাবে প্রভাবিত করে – খানিকটা স্ট্রেস পজিটিভ, তা আপনাকে অ্যালার্ট রাখে, ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দেয় না। তার পরের ধাপের স্ট্রেস হচ্ছে ‘টলারেবল’ – আপনি জানেন মনের উপর চাপ আছে, কিন্তু রোজের কাজ-কর্ম-দায়িত্ব ইত্যাদি পালন করতে কোনও অসুবিধে হয় না।
. সবচেয়ে ক্ষতিকারক হচ্ছে টক্সিক স্ট্রেস – তার প্রভাবে হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, স্মৃতিবিভ্রম, অ্যাংজাইটি, অ্যালঝাইমার্স হতে পারে। আচমকা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক বা ক্রনিক ডিপ্রেশন হওয়াও বিচিত্র নয়।
. মানুষভেদে স্ট্রেসের প্রভাব ভিন্ন হয়, তা ম্যানেজ করার ধরনও আলাদা। সামাজিক, আর্থিক অবস্থানও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া, জিনের প্রভাবও থাকে। তাই অন্য কারও কথায় নেচে উঠে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। নিজের সমস্যাটাকে সিরিয়াসলি নিন, একা একা কষ্ট পাবেন না, পেশাদারি সাহায্য নিলেই আপনার সমস্যা সেরে যাবে।
. স্ট্রেস ম্যানেজ করার ক্ষেত্রে শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। যথেষ্ট ঘুমোতে হবে, ভালো খাওয়াদাওয়া করতে হবে এবং এক জায়গায় টানা বসে থাকলেও চলবে না। যাঁরা ভাবছেন, একে হাতে তেমন টাকাপয়সা নেই, তায় আবার ভালো খাওয়া! ভালো বলতে কিন্তু আমরা সুষম খাবারের কথা বলেছি। ভাত, ডাল, সবজিসেদ্ধ, শসা, কলা, পেয়ারার মতো ফল আর ডিম/ সোয়াবিন /মাছ /পনির জোগাড় করতে পারলেই হবে। আর ঘরের কাজ করুন, হাঁটার পরিমাণ বাড়ান – সুস্থ থাকতে এর চাইতে বেশি কিছু লাগে না কিন্তু!
. কাউকে নিজের সমস্যা খুলে বললেই দেখবেন যে আপনার কষ্ট কমতে আরম্ভ করেছে। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক যখন বুঝতে পারে যে কেউ আমাদের খেয়াল রাখছে, যত্ন নিচ্ছে, তখনই ব্রেনের ‘সুদিং সিস্টেম’ অ্যাক্টিভেটেড হয়, স্ট্রেস ম্যানেজ করা সহজ হয়ে আসে।
. চাকরি পাননি এখনও? আপনার ভুলেই নিজের কিছু পয়সাকড়ি খোয়া গিয়েছে? ভুল হতেই পারে, তা থেকে শিক্ষা নিন। নিজেকে বেকার, অপদার্থ, নিষ্কর্মা ভাবতে আরম্ভ করলে আরও বিপদ হবে। তার চেয়ে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন, দরকারে মনোবিদের সাহায্য নিন।
. কোন পরিস্থিতিতে আপনার মন ভালো থাকে, কখন খারাপ হয় সেটা নিজেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। যদি মনে হয় কাজের প্যাটার্নে খানিক বদল আনলে মন ভালো থাকবে, তা হলে সেটাই করে দেখুন।