আমরা সাধারণত ভাবি, দিনকাল ভালো নয়, তাই দামি গয়নাগাঁটি বাড়িতে না রেখে ব্যাঙ্কের লকারে রাখা ভালো। কিছু টাকা ভাড়ার বিনিময়ে সে সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করবে ব্যাঙ্ক, আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি। কিন্তু ব্যাঙ্কের ভল্ট আসলে কতটা সুরক্ষিত?
এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে আপনি বাড়িতে দামি গয়না বা বাড়ির দলিল বা জরুরি কাগজপয়ত্রের জন্য যতটা সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবেন, ব্যাঙ্ক তার চেয়ে আঁটোসাটো নিরাপত্তা জোগাবে। তারা এমনভাবে ভল্ট নির্মাণ করে যাতে চট করে সেখানে ঢুকে পড়া যায় না, লকার খুব শক্তপোক্ত ধাতুতে বানানো হয়।
লকারের ভাড়া নিশ্চিত করার জন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রাখতে হয়, সাধারণ ভাড়ার তিনগুণ মূল্যের আমানত করানো হয় – গ্রাহক টানা তিন বছর ভাড়া না দিলে লকার খুলে দেখার অধিকার রয়েছে ব্যাঙ্কগুলির।
সাধারণত ব্যাঙ্কের কাছে লকারের একটি চাবি থাকে, অন্যটি থাকে গ্রাহকের কাছে। দু’টি চাবি এক হলে তবেই লকার খোলা যায়। লকারে কী রাখা হবে, তা একেবারেই গ্রাহকের ব্যক্তিগত ব্যাপার, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না ব্যাঙ্ক। এই ফাঁক গলেই লকারে ক্যাশ টাকা বা বেআইনি জিনিসপত্র রাখা হয়, এমন অভিযোগও ছিল অনেকদিন ধরেই।
লকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসার উদ্দেশ্য নিয়েই সংশোধিত বিধি জারি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তা মানতে হবে সব ক’টি ব্যাঙ্ককে। কী আছে সেই বিধিতে?
. অগ্নিকান্ড, চুরি-ডাকাতি, কর্মীর দোষ বা বাড়ি ভেঙে পড়ার কারণে গ্রাহকের সম্পত্তির ক্ষতি হলে ব্যাঙ্ক তার দায়ভার বাবদ গ্রাহককে ভাড়ার টাকার ১০০ গুণ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। সোজা হিসেব হচ্ছে, জিএসটি বাদ দিয়ে আপনার লকারের ভাড়া যদি বার্ষিক ২০০০ টাকা হয়, তা হলে আপনি সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পাবেন ব্যাঙ্কের কাছ থেকে।
. যদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেমন বন্যা, বা ভূমিকম্পের কারণে বা গ্রাহকের নিজের ভুলে সম্পত্তির কোনও ক্ষতি হয়, তা হলে তার দায় ব্যাঙ্ক নেবে না – অর্থাৎ কোনও কিছুই ফেরত পাওয়ার আশা নেই আপনার।
. ব্যাঙ্ক চত্বরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায় কিন্তু কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
. লকারে কোনও বিপজ্জনক, বেআইনি বা ক্ষতিকারক জিনিস রাখা যাবে না – তা নিশ্চিত করতে নতুন একটি ধারা যোগ হয়েছে।
. আগামী দিনে হয়তো বৈইদ্যুতিন লকার ব্যবস্থা চালু হবে। সেখানে ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের বেড়াজাল পেরিয়ে যেন কোনও প্রতারক ঢুকে পড়তে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেই।