কোভিডের আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি – চিন আর উত্তর কোরিয়ার সার্বিক লকডাউন আর ক্রমশ বাড়তে থাকা মৃত্যুহার দেখে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বিজ্ঞানীদের কপালে। এ দেশেও ফের বাড়তে পারে আক্রান্তের সংখ্যা – তেমনটাই বলছে কিছু গাণিতিক মডেল। তারই মধ্যে আবার মাথা তুলেছে এক নতুন আতঙ্ক, মাঙ্কি পক্স।
কাকে বলে মাঙ্কি পক্স? যে ভাইরাস থেকে স্মল পক্স হয়, তারই এক প্রজাতি এই বিশেষ পক্সের কারণ। এতে গায়ে, মুখে, হাতে, পায়ে বড়ো বড়ো ফোসকার মতো হয়। তা ফাটলে রস বেরোয় এবং সেই রস আর লালারস থেকেই রোগ ছড়ায়। কোভিডের মতো সর্বগ্রাসী নয়, মৃত্যুহারও অনেক কম। কোনও চিকিৎসা না হয়ে বিশ্রামে থাকলেও দিন পনেরোর মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যান। প্রথম রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক বানরের শরীরে এই ভাইরাল রোগটি দেখা গিয়েছিল, তাই এ হেন নাম।
মাঙ্কি পক্স হয় মূলত আফ্রিকার দেশগুলিতে। মধ্য আর পশ্চিম আফ্রিকার নানা দেশে বছরে কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। আফ্রিকার বাইরে হাতে গোনা কয়েকটি রোগের খবর পাওয়া গিয়েছে – সেগুলিও হয়েছে মূলত সে দেশ থেকে আসা মানুষেরই। কিন্তু গত এক সপ্তাহে সারা দুনিয়ার ১১টি দেশে মাঙ্কি পক্স আক্রান্তের খবর মিলেছে। ১৯৫৮ সালে সন্ধান পাওয়া এই ভাইরাস এর আগে কখনও এত সুদূরপ্রসারী হয়নি। এই সংক্রমণও মোটামুটি বিরলই বলা যায়। তাই আচমকা এ হেন বাড়বাড়ন্তে বিজ্ঞানীরাও আশঙ্কিত এবং তাঁরা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছেন।
বিশিষ্ট বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নেচার’ জানাচ্ছে, আফ্রিকার বাইরে পাওয়া মাঙ্কি পক্সের ভাইরাল স্ট্রেনগুলিকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভাইরাসের জেনেটিক প্যাটার্নে কোনও পরিবর্তন এসেছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা চলছে – সাধারণত এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে লক্ষণ প্রকাশ পায় কয়েকদিনের মধ্যেই। তা হলে আফ্রিকা মহাদেশেরর বাইরে ছড়িয়ে পড়ার আগে তা কেন ধরা পড়ল না? তা হলে কি মাঙ্কি পক্স ভাইরাসেরও অ্যাসিম্পটোম্যাটিক ক্যারিয়ার হয়? এটাই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
তবে আশার কথা হচ্ছে, পৃথিবীর জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশেরই স্মল পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া আছে, সে ক্ষেত্রে মাঙ্কি পক্স সামলাতে খুব বেশি অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।