এ কথা সবাই জানেন যে নানা টেরর অ্যাক্টিভিটি, আর অপরাধ জগতের কাজকর্ম ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে হয়। সেখানে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, অপহৃত নারী, চুরি যাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিক্রির বাজার আছে, চলে অঙ্গ বা অস্ত্র ব্যবসা, বেআইনি আর্থিক লেনদেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে সেই অন্ধকার পথে ঢোকার হদিশ থাকে না।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেই আপনি সেই অন্ধকার দুনিয়া সম্পর্কে খবরাখবর জোগাড় করার চেষ্টা করবেন, সেই মুহূর্তেই আইনরক্ষকদের রাডারে এসে যাবেন। আপনার গতিবিধির উপর নজর রাখা শুরু হতে পারে।
কিন্তু জানেন কি, এই অতি গোপন তথ্য আদানপ্রদানের সূত্রপাত হয়েছিল আমেরিকান ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের হাত ধরেই? আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। গত শতকের নয়ের দশকের শেষে যখন ইন্টারনেটের ব্যবহার মোটামুটি নয়া দিশা দেখাচ্ছে, তখন আমেরিকান প্রতিরক্ষা দফতরের আধিকারিকদের মনে হয়েছিল, বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আমেরিকান গুপ্তচরদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের জন্য খুব সুরক্ষিত একটা প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার। সেখান থেকেই তৈরি হয় এমন একটি নেটওয়ার্ক যা সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের হাতের নাগালের বাইরে থাকবে।
তার পর দেখা গেল মানবাধিকার বা স্বাধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তেমন ব্যক্তিরাও গোপন নেটওয়ার্কের আওতায় থাকতেই পছন্দ করছেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে, সাধারণ ইন্টারনেটে যেমন সরকারি খবরদারি চলে, ডার্ক ওয়েবে তা নেই। ফলে কোনও নিরাপত্তাও নেই, অসদুপায়েও তা কাজে লাগাতে পারে যে কেউ। বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেন হয় ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে, ফলে টাকাপয়সা ট্র্যাক করাও দুষ্কর। তবে সারা দুনিয়া জুড়েই সরকারি আধিকারিকরা ডার্ক ওয়েবের লেনদেনের উপর নজর রাখার চেষ্টা করছেন।
গুগলের মতো পরিচিত সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি ডার্ক ওয়েবে পা রাখবে পারবেন না। তার জন্য প্রয়োজন TOR নেটওয়ার্ক বা ‘দ্য অনিয়ন রাউটার’। অজস্র এনক্রিপশন থাকে, সে ছাঁকনির আড়াল ভেদ করে তথ্য আদানপ্রদান রীতিমতো কঠিন কাজ। .onion এক্সটেনশনের প্রায় ৬৫,০০০-৭০,০০০ ইউআরএল আছে টর নেটওয়ার্কে। বহু লিগাল কাজকর্মও হয় – এমনটা ভেবে নেওয়ার কারণ নেই যে ডার্ক ওয়েবে কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদীরাই সক্রিয়। যাঁরা তাঁদের কাজকর্ম লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে চান, তাঁদের অনেকেই ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেন।
যাঁরা TOR ব্যবহার করার কথা ভাবছেন, তাঁরা খেয়াল রাখবেন যে এখানে ম্যালওয়্যার বা পিশিং হয় খুব বেশি। আপনার ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য একেবারে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তাই সিকিউরিটি সফটওয়্যার রাখা একান্ত জরুরি।
এবার সবচেয়ে জরুরি প্রসঙ্গ। আজকাল বাচ্চারা অনেকক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং তাদের মনে সমস্ত নিষিদ্ধ বস্তু নিয়েই প্রবল আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক – তাই তাদের খুব স্পষ্ট করে বিপদের দিকগুলো বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। চাইল্ড পর্নোগ্রাফিসহ নানা ভায়োলেন্ট কনটেন্টের বাজার আছে ডার্ক ওয়েবে, সে সবের চক্করে পড়লে আফসোস করার রাস্তা থাকবে না। তাই কম্পিউটারে পেরেন্ট ট্র্যাকিং অ্যাপ লাগিয়ে রাখুন।