গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চাকরির বাজারে দুঃসময়ের কালো মেঘ ক্রমশ ঘনিয়ে উঠছে। ‘মেটা’ সংস্থার মার্ক জুকারবার্গ প্রকাশ্যে নিজের ঘাড়ে ব্যর্থতার দায় নিয়ে জানিয়েছেন যে, সংস্থার মোট কর্মীর ১৩% ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। ইলন মাস্ক মালিকের আসনে বসা থেকে ‘টুইটার’-এ চরম ডামাডোল চলছে, রোজই সেখান থেকে কর্মীদের ইস্তফা আর ছাঁটাইয়ের খরব আসে। ‘আমাজন’-এ ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি বন্ধ হয়েছে নতুন কর্মী নেওয়া, ‘গুগল’ এর মূল সংস্থা ‘আলফাবেট’-ও কর্মী সংখ্যা কমাচ্ছে।
এর মূল কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা – আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আগামী দিনে এই সমস্যা আরও বাড়বে। সাধারণত কোভিড ও লকডাউনের সময়ে যে সব সংস্থার ব্যবসা রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল রাতারাতি, তারাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে সবার আগে সঙ্কোচনের রাস্তায় হাঁটছে। আগামী বছরখানেক বা আরও কয়েক মাস আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেই অর্থনীতি ঝিমিয়ে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই অবস্থায় সংস্থার খরচ কমানো জরুরি। কারণ ব্যবসা কমবে, ফান্ডিং পেতেও সমস্যা হবে। তাই ছাঁটাই ছাড়া উপায় নেই।
ভারতে এর প্রভাব পড়তে আরম্ভ করে দিয়েছে। কারণ এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইএম, আইআইটি থেকে প্রতি বছর বহু কর্মী নেয় গুগল, মেটা-র মতো সংস্থা। সেখানে আপাতত লোক নেওয়া বন্ধ, ফলে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মোটা মাইনের অফারও তেমন পাচ্ছেন না। বহু ভারতীয় তরুণ-তরুণীর কাজ চলে যাচ্ছে, যাঁরা আমেরিকা-ইউরোপের নানা দেশে ছিলেন, তাঁরা ভিসা নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। বাইজুস, আনঅ্যাকাডেমির মতো এডুটেক সংস্থায় গত বছর দুয়েকের মধ্যে বহু কর্মসংস্থান হয়েছিল। ইদানীং সেখানেও ভাটার টান – বহু কর্মী কাজ হারাচ্ছেন।
এখানে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে – এই বাজারে দাঁড়িয়ে কাজ হারানোর শঙ্কা কাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি? সাধারণত যে সব কর্মীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাঁদের এই সমস্ত সুযোগে ছেঁটে ফেলে সব সংস্থাই। তার পরের কোপটা পড়ে সবচেয়ে জুনিয়রদের উপর বা একেবারে শেষে যে ডিপার্টমেন্টটি খোলা হয়েছিল তার উপর। যেহেতু এই কর্মীরা সবার শেষে কাজে যোগ দিয়েছেন, তাই কোম্পানি সাধারণত তাঁদের ‘অ্যাসেট’ হিসেবে গণ্য করে না। পুরো সময়ের কর্মীর চাইতে আংশিক সময় বা কনট্র্যাকচুয়াল কর্মীর কাজ যাওয়ার আশঙ্কা বেশি।
তবে এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খুব মুষড়ে পড়বেন না – বেশিরভাগ মার্কেট রিসার্চারের বক্তব্য হচ্ছে, অর্থনীতি চিরজীবন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে না – পালে হাওয়া লাগলেই ফের নিয়োগ শুরু হবে। তদ্দিন ছোটো কোনও সংস্থায় চাকরি খুঁজে নেওয়া বা আরও লেখাপড়া করে নিজেকে ক্ষুরধার করে তোলার দিকেই মন দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এই সময়টায় খরচপাতিতে একটু রাশ টানাও আবশ্যক।