বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সাম্প্রতিক নিউজলেটারে মদ্যপানের বিপজ্জনক দিকগুলি নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছে এবং পরিষ্কার জানিয়েছে যে কম-বেশি যে কোনও মাত্রার মদ্যপানই বিপজ্জনক হতে পারে। অ্যালকোহল গ্রুপ ১ কারসিনোজেন হিসেবে বিবেচিত হয়, তা খাদ্যনালী, লিভার, কোলোরেক্টাল, ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় বলেও ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
. এই পর্যন্ত পড়ে আপনি নিশ্চয়ই বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছেন এবং মাথা খানিক ঘুলিয়ে গিয়েছে? কারণ এতকাল আমরা জেনে এসেছি যে পরিমিত মদ্যপান, বিশেষ করে ওয়াইন পান করলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তা হলে আচমকা মদ্যপানকে বিপজ্জনক বলে দাগিয়ে দেওয়ার কারণ কী? WHO-এর বক্তব্য হচ্ছে, সীমিত মদ খেলে হার্টের ক্ষতি হয় না বা টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদেরও সুগার নিয়ন্ত্রণে সমস্যা নেই এমন একটা মতবাদের সপক্ষে কিছু গবেষণা হয়েছে। তবে তাতে ক্যানসারের শঙ্কা কমে, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
. সমীক্ষা বলছে, সামাজিক মেলামেশায় মদ্যপানের গুরুত্ব যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ‘অ্যালকোহল অ্যাট্রিবিউটেড ক্যানসার’ আক্রান্তের সংখ্যা। তা ছাড়া মদ্যপানের সব চাইতে বড়ো সমস্যা হল তা সাইকোঅ্যাকটিভ এবং অভ্যেসে পরিণত হয় খুব সহজে। একবার নেশা হয়ে গেলে তা চট করে ছাড়ানো যায় না। নেশার ঝোঁকে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, বাড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। কম বয়সে মদের নেশার খপ্পরে পড়লে মানুষ পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
. মদ্যপানের অত্যন্ত খারাপ প্রভাব পড়ে আমাদের লিভারের উপর। লিভার নিঃসৃত এনজাইম মদের পাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। প্রথম সিপ নেওয়ার সময় থেকে আপনার লিভার সক্রিয় হয়ে ওঠে, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে শরীরে যে টক্সিন প্রবেশ করে তা লিভার ইনফ্ল্যামেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লিভারে বাড়তি ফ্যাট জমে, সিরোসিস হতে পারে।
. বাদ যায় না প্যানক্রিয়াসও। অতিরিক্ত মদ্যপান প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে রক্তে চিনির মাত্রায় হেরফের হতে পারে।
. ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম। নিয়মিত মদ্যপান করলে ব্রেন আর শরীরের স্বাভাবিক কো-অর্ডিনেশন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে যুক্তি-বুদ্ধি ক্রমশ শান হারাতে আরম্ভ করে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না মানুষ। সমস্যা হয় আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও।
. গ্যাস, পেট ফাঁপা, হজমের সমস্যা পিছু ছাড়ে না।
. গর্ভাবস্থায় মদ্যপান করলে গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
. দীর্ঘদিন মদ্যপান করলে হাড়ের ঘনত্ব কমে, তা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
তাই সুস্থ জীবনযাপন করতে চাইলে রাশ টানুন মদ্যপানে। অনেকেই বলবেন যে জীবনের সব আনন্দ বিসর্জন দিয়ে বেঁচে থেকেই বা কী হবে? মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে, বিছানায় পড়ে থেকেও কিন্তু খুব সুখে থাকবেন না – তাই ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।