সময়ের ডানায় ভর দিয়ে আমরা যতই এগোই না কেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’টাই এখনও এ দেশের বেশিরভাগ মা-বাবার একমাত্র চিন্তা। আমরা মনে করি যে বাচ্চাকে ঠিকমতো খেতে-পরতে দিলে আর তার লেখাপড়া হচ্ছে কিনা তা দেখলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়।
কিন্তু বড়ো হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা বদলাতে থাকে। আজকের পৃথিবী ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। শিশু-কিশোররা দিনের অনেকটা সময় কাটাচ্ছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় –আসল আর নকলের ফারাকটা যাচ্ছে কমে। আর সদা ব্যস্ত মা-বাবা বা বড়োদের কারও সঙ্গে বাচ্চারা তা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, ১০-১৪ বছর বয়সের শিশু-কিশোরদের মধ্যে ডিপ্রেশন ক্রমশ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার ও কনডাক্ট ডিসঅর্ডার। দুই ক্ষেত্রেই বাচ্চার ব্যবহার ক্রমশ উগ্র হয়ে ওঠে, পড়াশোনায় মন বসে না, সে আচমকাই রেগে উঠতে পারে। সাইকোসিসে ভুগতে আরম্ভ করে অনেকে, খাওয়াদাওয়ার ইচ্ছে চলে যায় – কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত মাত্রায় খেতে আরম্ভ করে।
পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হলে কিন্তু সামলানো মুশকিল। এমনিতেই কিশোরবেলায় হরমোনের দাপাদাপি চলে শরীর জুড়ে, তার উপর রয়েছে প্রলোভনের হাজার হাতছানি। এই বয়সে বাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার একটা তীব্র ইচ্ছেও মাথাচাড়া দেয় – তা বাড়াবাড়ির মাত্রায় পৌঁছলে কিন্তু আপনার সন্তান না বুঝেই নিজের ক্ষতি করে ফেলতে পারে।
মনে রাখবেন, স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে ছেলেমেয়েদের মুক্তির আকাশটুকুও খোওয়া গিয়েছে। তারা মোটেই নিজের ইচ্ছেমতো সময় কাটাতে পারে না। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ নেই দীর্ঘকাল, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ানক অনিশ্চয়তা তাদেরও কুরে কুরে খাচ্ছে। এই অবস্থায় আপনাকেই বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।