কাচের বাসন দেখতে ভালো লাগে ঠিকই, কিন্তু তা ভেঙে যায় সামান্য ঠোনা লাগলেই। আর কাচের ভাঙা টুকরো খুঁজে বের করে ঘর পরিষ্কার করাটা যে কী ঝক্কির তা আমরা সবাই জানি। স্টিলের বাসন টেকসই, ভাঙাভাঙির ঝামেলা নেই, মাজাও সহজ। কিন্তু তা অতিথি আপ্যায়নের জন্য মানানসই নয় ঠিক। কাঁসা, পিতল ব্যবহারের নানা সমস্যা রয়েছে। তাই সবচেয়ে ভালো হচ্ছে সেরামিক।
সেরামিক দেখতে ভালো, কাচের মতো অত ঠুনকো নয়। দাম মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে। খাবার গরম করা খুব সহজ, কারণ সেরামিক সরাসরি মাইক্রোওয়েভে ঢুকিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। রান্নার বাসন হিসেবে সরাসরি আঁচের উপর বসানো যায় এমন সেরামিকও তৈরি হচ্ছে আজকাল।
কিন্তু মাটি বা সেরামিকের বাসন ব্যবহারের সময় কয়েকটি জরুরি বিষয় অবশ্যই মাথায় রেখে চলা উচিত। আপনি কি জানেন, সেরামিক বা পোড়ামাটির বাসন কীভাবে তৈরি করা হয়? সেরামিকের বাসন পোড়ানো হয় ভাটায়, তার আগে পাত্রের গায়ে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসার জন্য ধাতব গ্লেজ লাগানো হয়। এই গ্লেজের অন্যতম উপাদান হিসেবে থাকে নানা ধাতু, তারই অন্যতম হচ্ছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম। ভাটায় পুড়ে যখন বাসন পোক্ত হচ্ছে, তখনই সীসা কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু কোন বাসন কতক্ষণ পুড়ছে, তা জানবেন কীভাবে? আর মানুষের শরীরে সীসা নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তা জানেন নিশ্চয়ই?
সেরামিকের বাসন যদি রঙিন হয়, তা হলে কিন্তু বিপদ আরও বেশি। তার কারণ উজ্জ্বল লাল, হলুদ বা কমলা রঙেও কিছু পরিমাণ সীসার উপস্থিতি থাকে। তা বেশিক্ষণ পুড়লে বিপদ তেমন নেই, কিন্তু তা না হলে টকজাতীয় খাবারে সীসা বা অন্য নানা ধাতু চুঁইয়ে চুঁইয়ে প্রবেশ করতে থাকে। তাই গাঢ় কোনও রঙের সেরামিক বা পোড়ামাটির বাসনে দিনের পর দিন টক বা চা-কফিজাতীয় পানীয় খাবেন না, তাতে লেড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা থেকে যায়।
তবে সেই সঙ্গে এ কথাও ঠিক যে, আজকাল বহু নির্মাতাই বাসনে ব্যবহারের জন্য সীসা বা ক্যাডমিয়ামমুক্ত রং বেছে নিচ্ছেন। তাই ভালো ব্র্যান্ডের বাসন কিনলে টেনশন নিশ্চিতভাবেই অনেকটা কম। তার চেয়েও ভালো হয় রংহীন প্রডাক্ট কিনলে। বাসনের গায়ে ‘ফুড সেফ’ ছাপ্পা মারা থাকলে কেনা সবচেয়ে নিরাপদ। আর মনে রাখবেন, টক, খুব গরম পানীয় কাচের বাসনে খাওয়াই ভালো। খেতে পারেন স্টিলেও।