আপনি একা নন, এ সমস্যা আরও অনেকের আছে! এই তো ক’দিন আগে অভিনেত্রী সায়ন্তনী ঘোষ সোশাল মিডিয়ায় ফ্যানদের সঙ্গে আলাপচারিতা চালাচ্ছিলেন। আচমকা একজন প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, আপনার ব্রায়ের সাইজ কত?’
সায়ন্তনী প্রশ্ন এড়িয়ে যাননি, জিজ্ঞাসু ব্যক্তিকে কড়া জবাব দেওয়ার পাশাপাশি প্রশ্ন রেখেছেন সোশাল মিডিয়ার দেওয়ালে – স্তন তো শরীরেরই অঙ্গ, তা হলে তা ছোটো বা বড়ো হলেই সেটা আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠবে কেন? মেয়েরাই বা একেবারে কিশোরীবেলা থেকে নিজেদের শরীরের মাপ নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে বাধ্য হবেন কেন?
এরকম উদাহরণ কিন্তু একটা নয়, একাধিক দেওয়া যায়। ক’দিন আগে অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের লাইভ চলাকালীন এক ভক্ত তাঁকে মোটা বলেছেন, সদ্য মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া শুভশ্রী অবশ্য পাত্তাই দেননি সে কথায়! ভোটের বাজার তো রীতিমতো সরগরম নারী প্রার্থীদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে!
অবশ্য এ সমস্যা কিছু নতুন নয় – গায়ের রং শ্যামলা হলেই তাকে ‘কাজের ঝি’, ‘কালপ্যাঁচা’ বলা, লম্বা মাত্রই ‘সিড়িঙ্গে’, খাটো হলে ‘নাটকু’ বা ‘গ্যাঁড়া’, রোগাকে ‘কাঁকলাশ’ নাম দেওয়া হত আগেও। তবে সেটা সীমাবদ্ধ থাকত বন্ধুবান্ধব বা চেনা মানুষের ঘেরাটোপে। যাঁরা খুব ফরসা হন, বা সমাজের নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী রীতিমতো সুন্দরী, ধরে নেওয়া হয় যে তাঁদের ঘটে বুদ্ধির ছিটেফোঁটা নেই! যে সব পুরুষের সুঠাম, পেটানো গড়ন, তাঁদেরই কি আর ‘ঘাড়ে-গর্দানে’ বলা হয় না আবডালে?
তাই আপনার দাঁত উঁচু বা মাথার সাম্নের দিকে চুল কম থাকলে ঘাবড়াবেন না একদম – ঐশ্বর্যা রাইকেও যদি বাঁকা কথা শুনতে হয়, আপনি কোন ছার? সৌন্দর্য বা শরীরের আকার-প্রকার যাই হোক না কেন, কেউ না কেউ সমালোচনা করবেনই। যা আটকানো যায় না, তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই জীবনটাকে চুটিয়ে উপভোগ করা অনেক বেশি জরুরি।
# সোশাল মিডিয়ায় কেউ আপনার গায়ের রং বা মুখের গড়ন নিয়ে কিছু বললে পাত্তা দেবেন না
আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য, তার উপর আড়ালে থেকে যাকে যা ইচ্ছে বলা যায়। এদের অনেকেরই হাতে বিস্তর সময়, মন বিষে পূর্ণ। তাই কোনও তর্কে হেরে গিয়ে কেউ কুমন্তব্য করলে তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। বডি পজিটিভিটি সংক্রান্ত অনেক ফিড পাবেন, সেলেবরাও মুখের উপর জবাব দেন আজকাল – সেখান থেকে মনের জোর সংগ্রহ করুন।
# শরীরের গড়ন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না, সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন
সুস্থতার কোনও বিকল্প হয় না। তাই পরিমিত আহার আর ব্যায়ামের উপর জোর দিন। বাড়তি মেদ আপনাকে শারীরিকভাবে অসুস্থ করে তুলবে কেবল – সেটা হতে দেবেন না। তবে সেই সঙ্গে চিত্রতারকাদের মতো চেহারা পাওয়ার সংকল্প করবেন না, ওঁরা যেভাবে ট্রেনিং করেন বা যে ধরনের খাবার খান, সেটা সাধারণ মানুষের পক্ষে অকল্পনীয়।
# আপনি নিজের আসল চেহারাটাকেই ভালোবাসেন তো?
আপনি যদি নিজের কম উচ্চতা, অতিরিক্ত রোগা চেহারা, ভারী স্তন, কম চুল ইত্যাদি নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন, তা হলে গোটা দুনিয়া তো বাঁকা কথা শোনাবেই! আগে নিজেকে ভালোবাসুন। ইচ্ছেমতো সাজুন, কোনও সাধ অপূর্ণ রাখবেন না। যাঁরা সাজগোজ ভালোবাসেন না, তাঁদের সাজতে হবে না!
# আপনার চেহারাই কিন্তু আপনার অস্তিত্ব নয়
জীবনে কী কী শিখলেন, নিজের স্বপ্নের কত কাছে পৌঁছতে পারলেন সে সব ভাবুন। সমাজের সেট করে দেওয়া স্টিরিয়োটাইপের ফাঁদে পা দিয়ে অমূল্য সময় নষ্ট করবেন না! সেই গোপাল ভাঁড়ের সময় থেকে আমরা জানি যে মোটাসোটা, নধরকান্তি হলেই তাকে বিদূষক হিসেবে মানায় ভালো। এখনও সিনেমার পরদায় মারাত্মক ভালো অভিনেতার ওজন বাড়লে বা ভুঁড়ি গজালেই তাঁকে কমিক রিলিফ হিসেবে ভাবা হয়! এর বাইরে কিছু করতে গেলে আপনাকেই সচেষ্ট হতে হবে সবার আগে।
# আত্মবিশ্বাস হারাবেন না
কোনও কারণেই হতাশ হবেন না, বিশেষ করে কেউ চেহারা নিয়ে কুমন্তব্য করলে তো না-ই! কোনও বাধাই মানুষকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কিন্তু!