একটা কথা একেবারে গোড়াতেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো – কারও পক্ষেই সব কিছু মনে রাখা সম্ভব নয় – আমাদের ব্রেনের সে শক্তি নেই। কিছু কিছু অপ্রয়োজনীয় কথা আপনি ভুলে যাবেনই, আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিমাণ বাড়বে – এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই।
কিন্তু অনেক সময় এই ভুলে যাওয়ার সমস্যাটা রোজের জীবনে প্রভাব ফেলতে আরম্ভ করে। মানে ধরুন, আপনি খুব জরুরি কোনও মিটিংয়ের কথা ভুলে যাচ্ছেন, টাকাকড়ি বা গয়না কোথায় রাখছেন মনে থাকছে না প্রায়ই। বাকি পড়ে থাকছে ইলেকট্রিক বা ইন্টারনেটের বিল, গিজার চালিয়ে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন – এরকম বার বার হতে থাকলে কিন্তু অন্য নানা বিপদ হতে পারে।
দেখা যায়, খুব বেশি স্ট্রেস, রাতের পর রাত ঘুম না হওয়া, মানসিক উৎকণ্ঠা, ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা থাকলে ছোটো-খাটো নানা ভুল হয়। বিষয়টা সমস্যা তৈরি করলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিন – মূল অসুবিধে সেরে গেলে স্মৃতিও ফিরে আসবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রেনে কোনও টিউমার থাকলে বা মাথায় আঘাত লাগলেও স্মৃতি হারায় -– তবে গোড়াতেই ভেবে নেবেন না যে আপনারও ওই ধরনের কোনও সমস্যাই হয়েছে। টেনশন করলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।
অতিরিক্ত মদ্যপান বা বলা ভালো, কোনও নেশায় আসক্তি তৈরি হলেও কিন্তু মাঝে মাঝে ব্ল্যাক আউট হতে পারে – আচ্ছন্ন অবস্থায় কী করেছিলেন কিছুই মনে রাখতে পারবেন না। সাধারণত এঁরা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেন না, পুষ্টির অভাবে ব্যাহত হয় ব্রেনের বিকাশ। ভিটামিন বি১২-এর অভাবে স্মৃতি কাজ করে না ঠিকমতো। এই সব ক’টিই কিন্তু স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রংশের উদাহরণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কথা মুছে যায় মন থেকে, আবার যোগ হয় নতুন তথ্য। তা ছাড়া ব্রেনকে খাটালেও তার কার্যকলাপ অনেক উন্নত হয়, সেই সঙ্গে রোজ সকাল-বিকেলে খানিক ব্যায়াম করাও উচিত।
অ্যালজাইমার কারও রাতারাতি হয় না, তার লক্ষণ প্রকাশ পায় দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণত বেশি বয়সেই দেখা দেয় এ সমস্যা, তবে পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অল্প বয়সেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কিন্তু সমস্যার গভীরতাও বেশি হয়।
সাধারণত কি হয়, মানুষ বিয়ে বাড়ি বা কোনও অনুষ্ঠানে গিয়ে দূরের আত্মীয়দের নাম মনে করতে পারে না – অ্যালজাইমার রোগী একান্ত কাছের মানুষকেও চিনতে পারেন না মাঝে মাঝে। তাঁরা বাড়িতে বসে মনে করেন অচেনা কোনও জায়গায় আছেন। তাঁরা খেয়েছেন কিনা ভুলে যান, কথা বলার ভাষা খুঁজে পান না। শুরুটা হয় বার বা তারিখ ভুলে যাওয়া বা চাবি হারানো দিয়ে, মাত্রাটা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
কিছু কিছু মেন্টাল এক্সারসাইজ আছে যা সাহায্য করতে পারে এই অবস্থায়। সেই সঙ্গে জোর দিতে হবে অ্যাকটিভ থাকার উপরেও। থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলুন যত শিগগির সম্ভব যথাযথ চিকিৎসা ছাড়া কিন্তু পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপ হতে থাকবে।