আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সৌজন্যে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে আগের চেয়ে, সেই সঙ্গে বেড়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতাও। পাড়ার মোড়ে মোড়ে গজিয়ে উঠেছে জিম বা যোগচর্চার কেন্দ্র। শরীরে যদি মেদ জমতে না দেন, তা হলে ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থভাবে কাজ করবে বেশিদিন।
কিন্তু এর পাশাপাশি মেনে নিতে হবে আরও একটি সত্যি। বয়স ৪০ পেরিয়েছে মানে আপনার শরীরের কলকব্জা ধীরে ধীরে ধার হারাতে আরম্ভ করবে। যতই চেষ্টা করুন না কেন, ত্বকে পড়বে বলিরেখা, শিথিল হবে টানটান পেশি। আগের মতো পরিশ্রম করতে পারবেন না।
যাঁরা নিয়ম করে ব্যায়াম করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে হয়তো এই প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয় – কিন্তু জরার মার উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কুড়ির তারুণ্য আপনি ৪০-এ ধরে রাখতে পারবেন না – এ কথাটা মেনে নিলেই জীবনের অর্ধেক সমস্যা কমে যাবে। তার চেয়েও বড়ো কথা হল, প্রত্যেক মানুষের শরীর আলাদা। ভুল করেও অন্য কারও ফিটনেস রুটিন দেখে আপনি নিজের ফিটনেস জার্নি শুরু করবেন না।
মনে রাখবেন, আমাদের শরীরের আকার কেমন হবে, তার ৭০ শতাংশ নির্ভর করে ডায়েটের উপর, বাকি ৩০ শতাংশ করে ব্যায়াম। ব্যায়াম না বলে বরং অ্যাকটিভিটি শব্দটা ব্যবহার করা ভালো। যাঁরা বাড়ির কাজ, যেমন রান্নাবান্না, ঘর পরিষ্কার রাখা, বাজার দোকান করা, কাপড় কাচা ও শুকনো করার মতো নানা ধরনের অ্যাকটিভির সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের জেনেটিক সমস্যা না থাকলে ওজন সাধারণত খুব বেশি বাড়ে না। সকাল-বিকেল খানিক হাঁটাচলার নিয়মিত অভ্যেস থাকলেই এঁরা সুস্থ থাকেন। যাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই চেয়ারে বসে কাটিয়ে দেন, তাঁদের অবশ্য ব্যায়ামের রুটিন থাকা একান্ত জরুরি।
ডায়েট মানেই কিন্তু না খেয়ে থাকা নয় – বরং নিয়ম মেনে খাওয়া। খাবার আপনার শত্রু নয়, শক্তি। সিম্পল, ঘরোয়া খাবারে কিন্তু কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রোজের খাদ্যতালিকায় ফল আর শাকসবজি রাখুন, ভাত-রুটিও খাওয়া দরকার। খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল সব রাখতে হবে। সেই সঙ্গে প্রচুর জল খান।
আপনি কি কোনওদিনই স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন না? তা হলেও কিন্তু ৪০-এর কোঠায় এসে সুস্থ থাকার চেষ্টা শুরু করতে পারেন। হয়তো ধীরে উন্নতি হবে, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করলে মনে হবে যে আপনার শরীর তৈরি হতে বেশি সময় নিচ্ছে – তাতে আশা ছেড়ে দেবেন না।
আপনার ব্যায়ামের রুটিনকে কয়েকটি ভাগে ভেঙে নিন। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন বরাদ্দ রাখুন এরোবিক অ্যাক্টিভিটির জন্য। হাঁটা, দৌড়, সাইকেল চালানো, স্কিপিং করা — সবটাই হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। বাকি তিনদিন সব মাসল গ্রুপের শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করতে হবে। আর একদিন রাখুন ব্যালান্স ট্রেনিংয়ের জন্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নড়বড়ে হতে থাকে ভারসাম্য, হুট করে পড়ে যেতে পারেন – তাই যোগাভ্যাস করুন।
এক্সারসাইজ আর ডায়েট দুটোই চালান বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে। রোজ ঠিক কত ক্যালোরি খাবারের মাধ্যমে শরীরে যাবে, কতক্ষণ বিশ্রাম করা দরকার, ব্যায়ামের রুটিন কেমন হওয়া উচিত তা ঠিক করবেন পেশাদাররা। এই বয়সে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়, শরীর স্থিতিস্থাপকতা হারায় – সবদিক মাথায় রেখে আপনার রুটিন ঠিক করতে হবে। বছরে-দু’বছরে একবার কিন্তু রুটিন হেলথ চেকআপ প্রয়োজন। রিপোর্ট দেখে তার পর রুটিনে পরিবর্তন আনতে হবে।
যদি মনে হয় মানসিক চাপ বাড়ছে, যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে পারছেন না, খাওয়া-ঘুমের ঠিক থাকছে না, তা হলে ব্যায়াম করার ঝুঁকি নেবেন না। ক্লান্ত শরীর বাড়তি স্ট্রেস নিতে পারবে না। বিশেষ করে জিমে গিয়ে কঠিন পরিশ্রম যাঁরা করেন, তাঁদের আট ঘণ্টা ঘুম মাস্ট। রোজ কঠিন এক্সারসাইজ করাটাও বোকামি, মাঝে একদিন করে গ্যাপ দিন।
মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখাটাও কিন্তু খুব জরুরি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, হবির চর্চা করুন। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিন – মন ভালো রাখাটাও একইরকম দরকারি। বাড়তি স্ট্রেস আপনার সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিতে পারে!