আমেরিকার সেন্টার অফ ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষার ফলাফল রীতিমতো ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য সামনে এনেছে। দেখা গিয়েছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরে যাঁদের স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে, ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছে বা মারা গিয়েছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশই বাড়তি ওজনের চাপে ভুগতেন।
বিশ্বের যে ক’টি দেশে করোনা দাঁত-নখ বের করে আক্রমণ শানিয়েছে সবচাইতে বেশি, সেই তালিকার একেবারে উপরের দিকেই থাকবে আমেরিকার নাম। সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে আমেরিকা এমন একটি দেশ যার জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ ওবেসিটিতে আক্রান্ত। সেই কারণেই কি সেখানে এই অবস্থা হল? এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সময় লাগবে, তবে এমন একটা আশঙ্কা কিন্তু ডাক্তারদের মহলেই আছে।
যদি আপনি ভারতের দিকে তাকান, তা হলে কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের দেখবেন না – আমেরিকার মতোই আমাদের এখানেও কিন্তু ওবেসিটির সংখ্যা বাড়ছে – একেবারে স্কুলস্তর থেকেই শুরু হচ্ছে বাড়তি ওজনের চাপ। এক শ্রেণির মানুষের হাতে প্রচুর টাকা আছে, খাবার অর্ডার করা সহজ হয়ে গিয়েছে, দোকানপাটের সংখ্যা বেড়েছে। তার ফলে বারোটা বেজেছে স্বাস্থ্যের।
বাঙালি পুরুষের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হলে তাঁর ওজন বড়োজোর ৭০ কেজি হতে পারে, মহিলার উচ্চতা ৫’৩’’ হলে ৫৮ কেজির বেশি হওয়া উচিত নয়। ক’জন এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারবেন, বলুন? ওজন বেশি হলেই শরীরে বাসা বাঁধবে নানা অসুখ। কমতে আরম্ভ করবে ইমিউনিটি। এই সময়ের সবচেয়ে মারাত্মক ও শক্তিশালী ভাইরাসের নাম হচ্ছে করোনা ভাইরাস। সে আপনার দুর্বল প্রতিরোধক্ষমতাকে চট করে ঘায়েল করে ফেলবে।
সারা দিনে মাত্র মিনিট ৪৫ সময় বের করুন নিয়ম করে, রোজ। সেই সময়টায় জোরে হাঁটুন, দৌড়োন, নাচুন, সাইকেল চালান, সিঁড়ি ভাঙুন – যা খুশি করতে পারেন। মোদ্দা কথা, গা থেকে যেন ঘাম বেরোয়, হার্ট দ্রুত গতিতে দৌড়োয়, মুখ চোখ লাল হয়ে যায়। তবেই বাড়বে আপনার রক্ত সঞ্চালনের হার এবং নাছোড় মেদ পিছু ছাড়তে বাধ্য হবে।
সেই সঙ্গে খাওয়ায় রাশ টানুন। কম খেতে হবে, ইচ্ছে করলেই আইসক্রিম, কেক বা চকোলেট খাবেন না। চলবে না মিষ্টিও – তা সে আপনার সুগার থাক বা না থাক। লুচি, পরোটা, সব ধরনের ভাজাভুজি থেকে দূরে থাকতে হবে। সাধারণ কম তেল দেওয়া রান্না, রাতে কম খাওয়ার অভ্যেস তৈরি করে নেওয়া খুব ভালো। শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি করতে হবে – এইটা মাথায় রেখে এগোন। দুধ, ছানা, ঘি ইত্যাদি থেকেও সাবধান – একেবারে সব খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে না, কিন্তু কম খাওয়া জরুরি।