খুব তাড়াতাড়ি দৌড়চ্ছে মানুষ, সবার আগে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছনোর তীব্র চেষ্টা চলছে। কার কত বড়ো বাড়ি, কত আধুনিক গাড়ি তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। এমন সময় এল মারণ অসুখ – থমকে গেল পৃথিবী। মানুষ নিজের ভিতরপানে তাকিয়ে দেখা শুরু করল।
অতিমারি একটা বিরাট শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে আমাদের, তার দাপট কমলেও বোঝা গিয়েছে যে, খুশি থাকার জন্য খুব বেশি কিছু লাগে না। আশপাশে সত্যিকারের ভালোবাসার মতো কিছু লোকজন, আর জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় টাকাটুকু থাকলে দিব্যি চলে যায়। তাই বহু মানুষ বড়ো শহরের ব্যস্ত জীবন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন গ্রামে বা ছোট শহরে, নিজের মতো করে থাকছেন প্রকৃতির কোলে, বদলে ফেলছেন জীবনের দিশা।
অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা যেমন মুম্বই ছেড়ে এখন বেশিরভাগ সময়টাই থাকেন উত্তরাখণ্ডের মুক্তেশ্বরে। লকডাউনের আগে বেড়াতে গিয়েছিলেন স্বামীর সঙ্গে – এই ছোট্ট পাহাড়ি শহরে তাঁদের একটি বাড়ি আছে। সেখানে আটকে পড়েন তিনমাস। তার পর থেকে কাজে-কর্মে দরকার পড়লে দিল্লি বা মুম্বই ফেরেন, শেষ হলেই আবার ফিরে যান। সেখানকার নিস্তরঙ্গ জীবনের ভিডিয়ো পোস্ট করেন ইনস্টাগ্রামে, তা দেখার অপেক্ষায় থাকেন বহু অনুগামী। একটি ভিডিয়োয় বলেছিলেন, কীভাবে দামী ক্রিম, চায়ের পাতা, বিউটি পার্লার, নিত্য নতুন পোশাক বা পার্টির প্রয়োজন এখন আর তেমন অনুভব করেন না।
যেহেতু এখন বাড়ি থেকেই বাচ্চাদের স্কুল বা অফিসের বোর্ড মিটিং করা যাচ্ছে খুব সহজে, তাই আপনিও জীবনের গতিতে হ্রাস টানতে পারেন। এতে নিশ্চিতভাবেই স্ট্রেস লেভেল কমবে, বাড়বে শান্তি। খুব সহজ কয়েকটি উপায় ট্রাই করে দেখতে পারেন সুবিধেমতো।
১. ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়ো করবেন না
সকালটা আপনি কীভাবে শুরু করছেন, সেটা খুব জরুরি। ঘুম থেকে উঠেই লাফ দিয়ে উঠে রান্না, বাজার, ছেলের ক্লাস সামলাতে বসবেন না। সবার আগে রাতে তাড়াতাড়ি শুতে যাওয়ার চেষ্টা করুন, পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে সকালে উঠলে তাড়াহুড়ো করতে হবে না। খানিকক্ষণ নিজের জন্য রাখুন, চুমুক দিন সকালের চায়ের কাপে। বলা হয়, কিছু না করার জন্যও খানিক সময় রাখা উচিত। তাতে কাজের মান ভালো হয়। তবে কিছু না করা, ব্রেনকে খানিক ভাবার সময় দেওয়া আর কুঁড়েমি করা কিন্তু এক নয়, সেটাও মনে রাখবেন।
২. আপনার জীবনে কোন বিষয়গুলি একান্ত জরুরি, বেছে নিন
দেখবেন, এই তালিকাটা খুব লম্বা হয় না কখনওই। তার ছোট তালিকার সঙ্গে মানিয়ে চললেও আপনার খুশি থাকার পথে কোনও বাধা আসবে না।
৩. ধীরে-সুস্থে খাবার খান
খাওয়াটা উপভোগ করতে আরম্ভ করুন, দেখবেন জীবন বদলে গিয়েছে। ধীরে-সুস্থে খান, প্ল্যানিং করুন কী খাওয়া উচিত, সুস্থ থাকার উপরে গুরুত্ব দিন। তাতে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৪. আক্ষেপ রাখবেন না
আপনার যা যা করতে ইচ্ছে করে, সব করুন। কোনও খাদ রাখবেন না জীবনে। জীবন উপভোগ করতে আরম্ভ করলেই দেখবেন মানসিক চাপ, স্ট্রেস সব কমতে আরম্ভ করবে। কাউকে সাহায্য করুন নিঃস্বার্থভাবে, তাতেও খুব আরাম পাবেন।
৫. যখনই মনে হবে কাজের চাপে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ব্রেক নিন
নিজেকে খুব চাপ দেওয়ার দরকার নেই একেবারেই। মাঝে মাঝেই ছোট ব্রেক নেওয়ার চেষ্টা করুন। তাতে কাজের মান ভালো হবে। সব সময় যে ব্রেক নিলেই বেড়াতে যেতে হবে, তারও কোনও মানে নেই কিন্তু!